আ্যাশেজ সিরিজ/ ছাই-ভস্মের ঐতিহাসিক লড়াইয়ের শুরু আজ

ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরনো ও অন্যতম মর্যাদাকর প্রতিযোগিতা অ্যাশেজ সিরিজের ‘ছাই-ভস্মের’ উত্তেজনাকর লড়াই শুরু হচ্ছে আজ। এবারের অ্যাশেজ সিরিজটি হবে ইংল্যান্ডের মাটিতে। বার্মিংহামের এজবাস্টন স্টেডিয়ামে হবে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচটি।

দুটি বড় প্রশ্ন সামনে রেখে শুরু হচ্ছে এবারের সিরিজ। কয়েকদিন আগেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। তাই প্রথম প্রশ্ন, বিশ্বকাপের পর অ্যাশেজের ‘ছাই ভস্ম’ও নিজেদের করতে পারবে ইংলিশরা।

অন্যদিকে, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই ইংল্যান্ডের কাছে হেরেই বিদায় নিতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। তাই অজিদের প্রশ্ন, অ্যাশেজের ‘ছাই ভস্ম’ ধরে রেখে ‘শোধ’ নিতে পারবে ওয়ার্নার-স্মিথরা?

২০০১ সালের পর থেকে ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ সিরিজ জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। তাই এবার তাদের লক্ষ্য ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জেতাসহ শিরোপা ধরে রাখা। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য থাকবে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করা।

অ্যাশ মানে ‘ছাই’। এই ছাই’র জন্যই লড়াই করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এই লড়াইয়ে শুধু দুদেশ বা দুদেশের ক্রিকেটাররা চোখ রাখেন না। চোখ থাকে পুরো বিশ্বের।

এবারের অ্যাশেজ সিরিজ নাকি আসলে আগুন বনাম আগুন! দুই দলে পেস অ্যাটাকের দিকে তাকিয়ে এ রকমই মন্তব্য করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কার্টলি অ্যামব্রোস। ক্যারিবীয় সাবেক তারকার কথায়, ‘এই সিরিজে আমরা দু-একজন পেসারকে দেখব ঠিকই, কিন্তু অ্যাশেজ ভাগ্য ঠিক করে দেবে দুই দলের পেসাররাই।’

ইংল্যান্ডে জেমস অ্যান্ডারসন খেলবেন। চোটের জন্য গত সপ্তাহের আয়াল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে খেলেননি। মঙ্গলবারই ৩৭ বছরে পা দিয়েছেন জিমি। ৫৭৫ উইকেটের মালিক এই বয়সেও অ্যাশেজে তুরুপের তাস।

অজি সাবেক পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রার কথায়, ‘দেশের মাঠে জিমির যা পারফরম্যান্স তাতে ও বিশ্বে সবার সেরা।’ আর অ্যামব্রোসের মন্তব্য, ‘জিমি কিংবদন্তি। অসাধারণ বোলার। ফর্মে থাকলে অজি ব্যাটসম্যানদের ঝামেলায় ফেলবেই।’

অস্ট্রেলিয়ার পেস ব্যাটারির মধ্যে আবার এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে মিচেল স্টার্ককেও প্রথম টেস্টের বাইরে রাখা হতে পারে। কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারই বলেছেন, ‘স্টার্ক, হ্যাজেলউড, পিটার সিডল লড়াই করছে একটা পজিশনের জন্য। তিন জনই দুর্দান্ত পেসার। তাই নয় কি?’

তবে ল্যাঙ্গারই নিশ্চিত করেছেন, এজবাস্টন টেস্টে বল হাতে দেখা যাবে জেমস প্যাটিনসনকে। অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে সাড়ে তিন বছর পর খেলবেন প্যাটিনসন। মাঝের সময়টা চোটে বাইরে ছিলেন।

ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বিশ্বকাপ হিরো জফরা আর্চারের। যাকে নিয়ে অ্যামব্রোস বলেছেন, ‘জফরা ওয়ানডে খেলেছে, সারা বিশ্বে টি-টুয়েন্টি খেলেছে। টেস্ট অন্য ফরম্যাট হলেও সফল হতেই পারে।’

তবে বুধবার ইংল্যান্ড দল থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে এজবাস্টনে টেস্ট অভিষেক হচ্ছে না আর্চারের। তবু স্টুয়ার্ট ব্রড, অ্যন্ডারসন ছাড়া তৈরি মার্ক উড, ক্রিস ওকসরা। অ্যামব্রোসের কথায়, ‘ইংল্যান্ডের দল দেখতে হবে কীভাবে বাছে। কারণ, কোন পেসারকে খেলানো হবে সেটা ঠিক করাই কঠিন।’

এবারের অ্যাশেজ আরও একটি কারণে অজিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বল টেম্পারিংকাণ্ডে জড়ানোর পর প্রায় দেড় বছর পর আবার একসঙ্গে সাদা পোশাকের দলে ফিরেছেন তিন ‘পাপী’।

২০১৮ সালের মার্চে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ চলার সময় তৎকালীন অধিনায়ক স্মিথ, সহ-অধিনায়ক ওয়ার্নার ও ক্যামেরনের বিরুদ্ধে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ ওঠে। তাদের এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। ওয়ার্নার-স্মিথ বিশ্বকাপের নিজেদের প্রমাণের পর এবার সেই কেলেঙ্কারির ফরম্যাটে তাদের প্রমাণের পরীক্ষা।

বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে খুশি হলেও ইংলিশদের টেস্ট অধিনায়ক জো রুট বলেছেন, বিশ্বকাপ বড়, তবে অ্যাশেজ এখনো তার চেয়ে বড়।

রুট না বললেও বোঝা যায়, ইংল্যান্ডের কাছে অ্যাশেজ কত বড়। বিশ্বকাপ জেতার দু-সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো লন্ডনের রাজপথে ছাদখোলা বাসে সেলিব্রেশন হয়নি মরগান-রুটদের। ক্রিকেট ইতিহাসের এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

অথচ ২০০৫ অ্যাশেজ জেতার পর অ্যান্ডু ফ্লিনটফরা ছাদখোলা বাসে লন্ডনের রাজপথে সেলিব্রেশন। তখন রানী কর্তৃক বাকিংহাম প্যালেসের অভ্যর্থনায় সমগ্র স্কোয়াডকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সদস্য উপাধি দেয়া হয়। হয়তো অ্যাশেজটা জিতে জোড়া আনন্দ করতেই সেটা জমা রেখেছে ইংলিশরা।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে বারবার উঠে আসছে উভয় দলের বোলিং ইস্যুটা। দুই দলে পেসার নির্বাচন নিয়ে যে রকম জটিলতা, তাতে অ্যামব্রোস ঠিক কথাই বলেছেন। পেসাররাই ঠিক করে দেবেন অ্যাশেজের গতিপ্রকৃতি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!