আহতদের রক্ত দিতে মধ্যরাতে চবি শিক্ষার্থীরা বাস-ট্রাকে ছুটেন হাসপাতালে

মধ্যরাত। চারদিকে রক্তের জন্য হাহাকার। রক্তের চাহিদার তুলনায় রক্তদাতার সংখ্যা অপ্রতুল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রক্তের জন্য আকুতি জানিয়ে একের পর এক পোস্ট করছেন আহতদের স্বজন ও স্বেচ্ছাসেবীরা। এমতবস্থায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধদের রক্তের যোগান দিতে শহর থেকে ২২ কিমি দূরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস থেকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে গেছেন শত শত শিক্ষার্থী। যানবাহনের অভাব কিংবা পথের দূরত্ব, কোনটিই বাঁধা হতে পারেনি শিক্ষার্থীদের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্যাপ্ত বাস না পেয়ে কেউবা ছুটে গেছেন ট্রাকে আবার কেউবা ছুটেছেন মোটরবাইকে।

শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার রাত ২টার দিকে বিভিন্ন হল ও আশপাশের মেসগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হতে থাকেন তারা। যাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তবে অন্যান্য ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এতে যোগ দেন। তবে রাস্তায় কোনো গাড়ি না থাকায় বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য একটা বাস ও একটা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে৷ এছাড়া স্থানীয় পরিবহণ মালিকদের সংগঠন আরও দুইটি বাসের ব্যবস্থা করেন। এসব বাসে কয়েকশত শিক্ষার্থী রক্ত দিতে ছুটে যান।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নুর নবী রবিন বলেন, ‘রক্তের জন্য আহ্বান করার সাথে সাথে জিরো পয়েন্টে আমরা শতাধিক শিক্ষার্থী জমায়েত হই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো বাস পাইনি। এমন অবস্থায় কেবল নেগেটিভ ব্লাড ডোনারদের নিয়ে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই।

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম জাইফ আহমেদ বলেন, রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপে একটা পোস্ট দেখলাম। ” যারা রক্ত দিতে চমেক যেতে চান জিরো পয়েন্টে আসুন।” এদিকে সকালে আমাদের পরিক্ষা ছিলো। একজনের সাথে পরামর্শ করলাম কি করা যায়?

তিনি বললেন, আগে মানুষ বাঁচাই, পরে পরীক্ষা। আমরা ভেবেছিলাম এত রাতে রক্ত দিতে ক’জনই বা আসবে। কিন্তু জিরো পয়েন্টে গিয়ে রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম। শতশত শিক্ষার্থী চারদিক থেকে এসে মুহূর্তেই জড়ো হয়ে গেলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, অগ্নিদগ্ধদের রক্ত দিতে শহরে যাওয়ার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা বাস ও একটা অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছি।

চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, মানবিক বিপর্যয়ে যে যার জায়গা থেকে এগিয়ে এসেছে। আমরাও আমাদের জায়গা থেকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। আমরা রক্ত দিতে শহরে যাওয়ার সুবিধার্থে শিক্ষার্থীদের জন্য দুইটি দ্রুতযান বিশেষ বাস সার্ভিস দিয়েছি।

এমআইটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!