আসছে কোরবানির পশু, চট্টগ্রামে বসে গেছে হাট

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পশু আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। জেলা-উপজেলা থেকে আনা পশুগুলো ব্যবসায়ীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে মজুদ করেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই গরু, ছাগল, মহিষ, উট ও ভেড়ায় ভরে উঠবে চট্টগ্রামের হাটগুলো। খামারিরা বেশিসংখ্যক পশু প্রস্তুত করায় এবার চট্টগ্রামে পশু সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শনিবার (৩ আগস্ট) থেকে চট্টগ্রামের বাজারে পুরোদমে পশু বিক্রি শুরু হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে এবার মোট আটটি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে দুটি স্থায়ী ও ছয়টি অস্থায়ী। স্থায়ী গরুর বাজারগুলো হলো সাগরিকা ও বিবিরহাট। আর অস্থায়ী বাজারগুলো হলো সল্টগোলা রেলক্রসিং হাট, কর্ণফুলী হাট, পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, পোস্তার পাড় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, স্টিলমিল হাট ও কমল মহাজন হাট।

বুধবার (৩১ জুলাই) বিকালে বিবিরহাট ও সাগরিকা গরু বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা গরুগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া তারা গরুগুলো দিনরাত দেখভাল করছেন।

জানা যায়, গরু ব্যবসায়ীরা দেশের সবচেয়ে বড় বাজার নওগাঁর চৌবাড়িয়া হাট, রাজশাহী সিটি হাট, রংপুর বড় বাড়ি হাট, যশোর সাতমাইল বাজার, সীমান্ত এলাকা পঞ্চগড়ের ভোদা বাজার, কুষ্টিয়া বাবন্দি ও বাইল পাড়া বাজার থেকে গরু কিনে চট্টগ্রামে আনছেন।

স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। তিনি জানান, এবার চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর চাহিদা সাত লাখ ২০ হাজার ৯৫৭টি। এর মধ্যে নগরী ও জেলার ১৪টি উপজেলায় মোট সাত হাজার ৫০টি খামারে ছয় লাখ ১০ হাজার ২১৯টি পশু স্থানীয় খামারে মজুদ আছে। অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজার পশু সংগ্রহ করতে হবে।

পশু সংকট হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লাখ পশু চট্টগ্রামে আসে। চট্টগ্রামে স্থানীয় খামারিরা গরু মোটাতাজা করায় গরুর কোনো সংকট হবে না।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে পর্যন্ত নগরীর ২৩৪টি খামার ও উপজেলার তিন হাজার ৭৯৪টি খামারে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৭১টি ষাঁড়, ৯১ হাজার ২১১টি বলদ, ১৫ হাজার ৯৮৮টি গাভী, ৩৯ হাজার ৬০৭টি মহিষ, ৯২ হাজার ২০৯টি ছাগল ও ৩০ হাজার ৮৮৭টি ভেড়াসহ মোট পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৫৭১টি কোরবানির পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। গত ১ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত আরও তিন হাজার ২২টি নতুন খামার গড়ে উঠেছে। এতে ৯৪ হাজার ৬৮৮টি পশু মোটাতাজা করা হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে ছয় লাখ ১০ হাজার ২১৯টি কোরবানির পশু মজুদ আছে।

চট্টগ্রামে ট্রাকে করে আসছে কোরবানির গরু।
চট্টগ্রামে ট্রাকে করে আসছে কোরবানির গরু।

হাটহাজারীর আমান বাজারের মজিদ আব্বাস চৌধুরী বাড়ির মো. মিজান বলেন, ‘আমি কুষ্টিয়ার বাবন্দি বাজার থেকে ২২টি গরু এনেছি। দুইএকদিনের মধ্যে আরও গরু আনতে যাব। আশাকরি এবার বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু আসবে।’

খামারি মো. মিজানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দিনরাত গরুর পরিচর্যা করতে হয়। তিনজন লোক এ খামারে কাজ করেন। মিয়ানমার ও ভারতে থেকে পশু না আসলে এবার কোরবানিতে ভালো লাভে গরু বিক্রি করতে পারবো।’

সাগরিকা গবাদি পশু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. অলিউল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘ব্যাপারিরা বাজারে গরু নিয়ে আসছেন। তবে অধিকাংশই এখনো দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু সংগ্রহে ব্যস্ত আছেন। ব্যবসায়ীদের চোখে ঘুম নেই। বৃহস্পতিবার থেকে গরু বিক্রি শুরু হলেও কোরবানির তিন থেকে চারদিন আগে গরু বিক্রি জমে উঠবে৤’

তিনি জানান, গরু বিক্রেতারা সাগরিকা বাজারে ২০০টি গরু এনেছেন। কয়েকদিন পর আরও গরু নিয়ে আসবে। ব্যবসায়ীরা কুষ্টিয়া, কুটখালীসহ নানা জেলা থেকে গরু এনে সাগরিকা বাজারে বিক্রি করেন। তবে এবার দেশের বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে বলে জানিয়েছেন মো. অলিউল্লাহ।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!