আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮ বছর/ সাড়ে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েও হয়নি স্কুল ভবন
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সমুদ্র উপকূল খানখানাবাদে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খানখানাবাদ আইডিয়াল হাই স্কুল। বর্তমানে এ স্কুলে এমপিওভুক্ত ও নন এমপিওভুক্ত মিলে ১০জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩৯১ জন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এমপিওভুক্ত এ স্কুলে নেই কোনো স্থাপনা কিংবা ভবন। জায়গা বিরোধে স্কুলের মালিকানাধীন ৭৫ শতক জায়গায় প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন না কোনো ধরণের স্থাপনা। ফলে ২০০১ সাল থেকে স্কুলের জায়গা থেকে ২০০ ফুট দূরে অস্থায়ীভাবে একটি জরাজীর্ণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ঝুঁকি নিয়ে দায়সারাভাবে চলছে স্কুল কার্যক্রম। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর বিষয়টি অবহিত হলেও স্কুলের নিস্কন্টক জায়গা উদ্ধারে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেই।
স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী স্কুল ভবন শূন্য ওই স্কুলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ তলা ভবন বরাদ্দ দিলেও তা ফেরত যাবার পথে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে খানখানাবাদ স্কুলে গিয়ে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি, শিক্ষক ও গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী গ্রামবাসী চাঁদা তুলে এবং জমি দান করে ৭৫ শতক জায়গার উপর বাঁশ ও বেড়া দিয়ে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ওই ৭৫ শতক জায়গা স্কুলের নামে দলিলও হয়। ঘূর্ণিঝড়ের ঝড়ো হাওয়ায় ২০০১ সালে বাঁশ ও বেড়ার তৈরি স্কুলটি ভেঙ্গে গেলে পাশের জরাজীর্ণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে স্কুল কার্যক্রম চলে আসছিল। এর পর থেকে স্থানীয় দুই ব্যক্তি স্কুলের জায়গায় কোনো ধরণের স্থাপনা করতে দিচ্ছে না। মামলা মকদ্দমা করে স্কুলের জায়গাটি দখলের চেষ্টা করলেও আদালত বার বার স্কুলের পক্ষে রায় দিচ্ছে। তারপরও ওইসব দুস্কুতিকারীদের বাধা যেন থামছে না।
স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির দাতা সদস্য বাবুদার আলম বলেন, ‘আমিসহ গ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তি চাঁদা তুলে জমিদান ও জমি ক্রয় করে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত করি। ৭৫ শতক জায়গা স্কুলের নামে খতিয়ানভুক্ত দলিল হয়। ওই দলিল দেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুলটি এমপিওভুক্ত করেন। যার স্কুল কোড ৩৫৭৩। কিন্তু গ্রামের ফরিদ আহমদ ও সুলতান এ সবুর নামের দুই ব্যক্তি স্কুলের জায়গাটি দখল করার জন্য নানাভাবে চক্রান্ত করে আসছে। যার ফলে স্কুলের জায়গায় কোনো ধরণের স্থাপনা ও ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়নি। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে স্কুল কার্যক্রম চলে। মামলা মকদ্দমাও করে আসছিলেন। আদালতও স্কুলের পক্ষে রায় দেন। সম্প্রতি স্কুলের জায়গায় ভবন নিমার্ণে উদ্যোগ নিলে তাতেও তারা আপত্তি জানায়। আমার দাবি এলাকার শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে স্কুলের জায়গায় স্কুল ভবন নিমার্ণ হোক।’
স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্কুলের জায়গা নিয়ে অহেতুক বিরোধ ও ভবন নির্মাণে বাধা প্রদানের ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। প্রশাসন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছ বলেন, ‘অস্থায়ী জরাজীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠদান করতে নানামুখি দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুলের জায়গায় স্কুল ভবন নির্মাণ হলে স্কুলের পরিবেশ ফিরে আসবে।’
স্কুলের জায়গাটি নিজের জায়গা দাবিকারি ফরিদ আহমদ বলেন, ‘ আমি জায়গাটি দান করেছিলাম ঠিকই। কিন্তু শর্ত ছিল ওই জায়গায় স্কুলের কোনো স্থাপনা না হলে পুনরায় জায়গাটি আমি ফিরিয়ে নিতে পারব। ওই জায়গায় আমাদের পারিবারিক কবরস্থান এবং স্কুলের কোনো স্থাপনা নেই তাই জায়গাটি ফেরত পেতে আমি বাধ্য।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘স্কুলের জায়গায় নুতন ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ এসেছে। যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কারো বাধা স্কুলের উন্নয়ন কাজ বন্ধ করতে পারবে না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘স্কুলের বিরোধে জড়িত উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ আসলেও সুলতানে সবুর ও ফরিদ আহমেদ আসেননি। যাইহোক স্কুলের জায়গায় স্কুল ভবন হবে। এলাকার শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের পথ কেউ বন্ধ করতে পারবে না।’
বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকার স্কুলটিতে আমি কয়েকবার সভা সমাবেশ করেছি। ওই স্কুলের কোন ভবন না থাকার খবর শুনে আমি নিজ উদ্যোগে প্রকৌশল শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ৪ তলা ভবনের বরাদ্দ দিই। যে বিরোধই হোক না কেন স্কুলের জায়গায় স্কুল ভবন অবশ্যই নির্মাণ হবে। প্রশাসনকে আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য বলেছি।’
এএইচ