আল্লামা শফীর জায়গা নিতে চান বাবুনগরী, গুজবে তোলপাড় বড় মাদ্রাসা

ভিডিওতে এসে জবাব দিলেন অসুখে পড়া শফী

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ওলামা পরিষদের ব্যানারে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম বা হাটহাজারীর মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে অতীতের মতো সূরা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এক বয়স্ক আলেমের বক্তব্যকে ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

শনিবার (১৬ মে) জোহর নামের পর ওলামা পরিষদের কয়েকজন নেতা মাদ্রাসার মোহতামিম নিয়োগ নিয়ে বক্তব্য দেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক বক্তা বলছেন, অতীতের মতো সূরা বৈঠক নির্ধারণ করবে মাওলানা শাহ আহমদ শফির পর কে হবেন মোহতামিম।

এরপর গুজব রটে— আহমদ শফি বেহুশ। কোন সিদ্ধান্ত দিতে অক্ষম। তাই হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মোহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী। এর জবাবে শনিবার রাতে মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী এক ভিডিও বার্তায় এ দাবি নাকচ করে দেন।

ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্বে আসার পর থেকে এই মাদ্রাসার জন্য কী করেছি না করেছি, সব মানুষের জানা আছে। ভিত্তিহীন কিছু কিছু অপবাদ দেয়া হচ্ছে। সারাটা জীবন মাদ্রাসার জন্য নিজের জীবনকে কোরবান করে দিয়েছি। কাউকে নায়েবে মোহতামিম অথবা জিম্মাদার করে দিইনি। যা কিছু করার মাদ্রাসার জন্য সব মজলিসে শূরা করবে।’

এ বিষয়ে শাহ আহমদ শফীর অনুসারী হেফাজতে ইসলামের এক নেতা বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরী দুইজনই আমাদের কাছে সম্মানিত। তাঁদের সম্মান রক্ষা আমাদের সকলের দায়িত্ব। একটা কথা সর্বজনস্বীকৃত, তা হলো শায়খুল ইসলাম আহমদ শফীর পরের স্থান আল্লামা বাবুনগরীর। বাবুনগরী সাহেবকে বার বার শায়খুল ইসলামের প্রতিপক্ষ করার কী কারণ! শায়খুল ইসলাম জীবিত থাকতে কেন তারা বাবুনগরী সাহেবকে শায়খুল ইসলামের জায়গায় বসাতে তৎপরতা চালাচ্ছে?’

‘যেখানে ২০১৭ সাল থেকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিজাহুল্লাহ মজলিসে শুরা কর্তৃক নিযুক্ত হাটহাজারী মাদরাসার মুঈনে মোহতামীম (সহকারী পরিচালক)। সেখানে আজকে হাটহাজারীর কিছু আলেম গুজব (হাটহাজারীতে নতুন পরিচালক নিয়োগ দিচ্ছে) ছড়িয়ে, হাটহাজারী মাদ্রাসার মসজিদে এসে শোরগোল করলো। এরপর বাবুনগরী সাহেবকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বলে ঘোষণা করে দিলো। এ পুরো বিষয়টি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিলো, যা এখন আয়নার মতো পরিষ্কার’— যোগ করেন তিনি।

আল্লাহ শাহ আহমদ শফির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এই নেতা আরো বলেন, ‘হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক কে হবেন তা ঠিক করবেন মাদ্রাসার শুরা কমিটি। এটা তো বাইরের কেউ করবে না। যদি কেউ করে তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। আহমদ শফির ভিডিও থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার, যারা বলছিলো, শায়খুল ইসলাম বেহুঁশ, কথা বলতে পারে না, কাউকে চিনে না। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হলো।’

তবে আল্লাহ শাহ আহমদ শফীর অনুসারীদের কারও কারও দাবি, হেফাজতের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ তৈরি করতে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এর অংশ হিসাবে শনিবার (১৬ মে) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হাটহাজারী ওলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দ আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক থেকে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম বা হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে আল্লামা শফিকে সরিয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়।

তবে এ ব্যাপারে জানতে জুনায়েদ বাবুনগরীর মুঠোফোনে ফোন করলে তার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে একজন বললেন, ‘মাদ্রাসা পরিচালিত হয় শুরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। কে কী বলল, করল এসবে হুজুরের (বাবুনগরীর) কোন আগ্রহ কিংবা সম্পৃক্ততা নেই।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!