২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ ছড়ারকুল এলাকায় একটি সেলুনে শিবির কর্মীদের গুলিতে খুন হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি আলী মর্তুজা চৌধুরী। ২০০৩ সালে
তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খুনের বিচার দাবি করেছিলেন। এরপর কেটে গেছে দেড় যুগ। বছরের পর বছর ধরে চলছে বিচারকাজ। অবাক করা বিষয় হল, তিনবার রায় ঘোষণার তারিখ দিয়েও ঘোষণা হয়নি রায়।
এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভাই হত্যার বিচার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন আলী মর্তুজার ভাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী।
তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক শহীদ মোহাম্মদ আলী মর্তুজা চৌধুরীর হত্যার বিচারের দাবি করেছিলেন। ২০০৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর শহীদ মর্তুজার বাড়িতে গিয়ে এবং তার কবরে ফুল দিয়ে আপনি আপনার কর্মীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করেছিলেন। আপনি হয়তো জানেনই না আজও মরতুজার খুনের বিচার হয়নি। আপনি বিচার ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার করলেও অব্যবস্থাপনা এবং হয়রানি বন্ধ হয়নি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘মর্তুজা হত্যার বিচারের রায় ঘোষণার পরপর তিন বার তারিখ দিয়ে মামলা এখন আবার অন্য আদালতে। বিচারের নামে প্রহসনের এ যাতনা কেবল ভুক্তভোগীরাই অনুভব করতে পারে। আপনি যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের এসব দেখার সময় নেই। বিশ্বাস রাখি, আপনার দৃষ্টিগোচর হলে দায়িত্বশীলদের জবাবদিহি করতেই হবে।’
এর আগে ২০০২ সালে প্রকাশিত আলী মর্তুজা স্মৃতি স্মারক নামে একটি প্রকাশনায় বাণী দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে প্রধানমন্ত্রী আলী মর্তুজা খুনের বিষয় তুলে ধরে এর সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
জানা যায়, ২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ ছড়ারকুল এলাকায় একটি সেলুনে শিবির কর্মীদের গুলিতে খুন হন তিনি। পরদিনই হাটহাজারী থানায় মামলা করেন তাঁর বড় ভাই ও ফতেয়াবাদ আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী নাসের চৌধুরী। এতে আসামি করা হয় আটজনকে। চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই মামলার বিচার চলে। ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, এই মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ২০০৪ সালে এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এতে আটজনকেই অভিযুক্ত করা হয়। আসামিদের মধ্যে ঘটনার পর থেকে পলাতক শিবির ক্যাডার হাবিব খান। জামিনে গিয়ে পলাতক মো. হাসান ও মো. ইসমাইল। অন্যদিকে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সন্ত্রাসী গিট্টু নাসির, গণপিটুনিতে নিহত হন আইয়ুব আলী ওরফে রাশেদ এবং সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সাইফুল ইসলাম। শিবির ক্যাডার তছলিম উদ্দিন ওরফে মন্টু ও মো. আলমগীর ওরফে বাইট্টা আলমগীর কারাগারে।
এর আগে আলোচিত এই নৃশংস হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ হয় গতবছর মে মাসে। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তিনবার আলী মর্তুজা হত্যা মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন। এরপরও রায় ঘোষণা না হওয়ায় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী ফতেয়াবাদ আদর্শ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী নাসের চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মামলার সব কার্যক্রম শেষে চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে তিন তিনবার রায় ঘোষণার তারিখ দেওয়া হয়। কিন্তু একবারও রায় ঘোষণা হয়নি। বর্তমানে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচারাধীন রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাড়িতে এসে আশ্বাস দিলেও এখনো বিচার পাইনি। আমাদের একটাই প্রত্যাশা দ্রুত যেন মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়ে খুনিদের শাস্তি কার্যকর হয়।’
এত বছর পরও বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়েছি তৎকালীন রাষ্ট্রপক্ষের কৌসূলীদের আন্তরিকতার অভাব ছিল। তাই বারবার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ দিয়েও রায় ঘোষণা হয়নি।’
মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের পিপি আইয়ুব খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এমএফও