আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আজীবন বহিষ্কার

আ'লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আজীবন বহিষ্কার 1প্রতিদিন ডেস্ক : আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে তাকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে বলে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরআগে বিদ্রোহী হলে বরখাস্ত করা হতো। এবার দলীয় কোন্দল তুঙ্গে থাকায় একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের।

শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের যৌথসভায় এমন কঠোরবার্তা জানিয়ে দেন দলের সভাপতি। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্যদের নিয়ে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।

তফসিল ঘোষণার পর দলীয়ভাবে প্রথমে ৩০০ আসন, পরে জোটের অন্যান্য শরীকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত আসন বণ্টন, বামগণতান্ত্রিক জোট ও জাকের পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আওয়ামী জোটে আসার আবেদন এবং আল্লামা আহমেদ শফীর নেতৃত্বাধীন কওমী আলেমদের নিয়ে কোনো মন্তব্য না করার বিষয়ে আলোচনা হয় যৌথসভায়।

এছাড়া নির্বাচনকেন্দ্রীক কয়েকটি উপ-কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন ও প্রতিটি নির্বাচনী আসন থেকে ৩জনকে প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। এসময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ ১৫ টি কমিটি গঠন করা হয়।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া যৌথসভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকের শুরুতে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন দলটির দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

এরপর বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখেন, ১৪ দলের মূখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন।

যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন নেতা ও সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন কঠিন হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে বলেছেন। নির্বাচনে দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। যদি কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়, তাহলে পূর্বে ছাড় পেলেও এবার তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য তাকে বহিষ্কার করা হবে। এসময় সব নির্বাচনী আসনের দলীয় সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রার্থীর সকল জরিপ তাঁর হাতে এসেছে বলে বৈঠকে জানান।

তিনি জানান, আজ (শুক্রবার) ফজরের নামাযের পরে তিনি ২টির মতো গোয়েন্দা ও জরিপ রিপোর্ট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন। এর আগে ৬০ থেকে ৭০ টির মতো রিপোর্ট দেখছেন বলেও উল্লেখ করেন। যেসব মনোনয়ন প্রার্থী নিজেকে জাহির করতে দলীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের রিপোর্টও তার কাছে আছে বলে জানান। এধরণের কাউকেই মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন তিনি।

বৈঠকের এক পর্যায়ে আল্লামা আহমেদ শফীর নেতৃত্বাধীন পরিচালিত কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কোনো ঠিকানা ছিল না। আমরা তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছি। তাদের কর্মসংস্থান যেনো হয়, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। আওয়ামী লীগ সম্পর্কে কওমি আলেমদের একটা ভুল ধারণা ছিল। আমরা তাদের সেই ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিতে পেরেছি। তারা এখন আওয়ামী লীগের সুনাম বলে। আমার বিশ্বাস আগামীতে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের ভোট আমরা পাব। কিন্তু নির্বাচনের পূর্বে অনেকেই চেষ্টা করবে, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের দূরত্ব তৈরীর চেষ্টা করবে। ১৪ দলের কোনো নেতার কোনো বক্তব্যে যেনো এমন কিছু বলা না হয়, যাতে করে কওমি আলেমদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এজন্য সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে।

সভার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাকের পার্টি ও ইসলামিক গণতান্ত্রিক জোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে চায় বলে ৩টি আবেদনের কথা তুলে ধরেন। তবে এ বিষয়ে দলীয় প্রধান সভায় কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বলে জানান কেউ কেউ।

সভায় আগামী নির্বাচনে প্রথমে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এরপর জোটের শরীকসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত আসন বন্টন করার কথা জানান শেখ হাসিনা।

যৌথ সভায় জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৩৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া নির্বাচন ইস্যুতে আরো ১৫টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য গঠিত ৩৩ সদস্যের প্রধান কমিটি ওই উপ-কমিটিগুলোর কর্মকাণ্ড তদারকি করবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!