আ’লীগের জাতীয় কমিটি সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ

দ্রোহ-সংগ্রাম জীবন

শপথ ছিল বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসিতে না ঝুলানো পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনার কাছ থেকে কিছু চাইবেন না। এই না চাওয়াতেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছেন চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ।

১৭ ডিসেম্বর গণভবনে জাতীয় কমিটির এক সভায় তিনি যোগ দেন। এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মোহাম্মদ ইউনুছকে জাতীয় কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২২তম জাতীয় কাউন্সিল ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বাজেট বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘আমার শ্রদ্ধেয় আপা, আমার নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ ক্ষমতা বলে আমাকে জাতীয় কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়। নেত্রীর দোয়া ও আশীর্বাদ আমার জীবনের চলার পথের পাথেয়।’

জানা যায়, ছাত্রলীগের স্কুল সভাপতি থেকে নগর সভাপতি পর্যন্ত হয়েছেন মোহাম্মদ ইউনুছ। এ বীরমুক্তিযোদ্ধা ১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা সর্বদলীয় মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত দুই মেয়াদে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি অবস্থায় চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাবেক মেয়র আজম নাছির উদ্দিন।

এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত দুইবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক হন। ১৯৮৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন।

জাতীর মুক্তির সংগ্রামে ১৯৬৯ সালে গ্রেপ্তার হয়ে ১৫ দিন কারাগারে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি বাতিলের আন্দোলনে যুক্ত থেকে পাকিস্তান সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে ৯ মাস সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন।

১৯৭৬ সালে ‘বিশেষ সামরিক আদালত- ৪’ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮০ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিজীবন কাটান। চার বছরের কারাজীবনে দুবছর কাটিয়েছেন কনডেম সেলে।

তিনি ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঐতিহাসিক লালদিঘীর ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভায় পাকিস্তানি পতাকা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন ইউনুছ। পরদিন ৩ মার্চ বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে চট্টগ্রামের রাজপথ প্রদক্ষিণ করেন।

২৭ মার্চ পাক নৌ-কমান্ডোর সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরে প্রথম সংঘর্ষ এবং রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হন তিনি। ২ মাস ৬ দিন ধরে শারীরিক নির্যাতন সহ্য করে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পালিয়ে ভারত পাড়ি দেন। ভারতের উত্তর প্রদেশ দেরাদুন তানদুয়ায় ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধের সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ইউনুছ।

এদিকে জিয়াউর রহমানের সামরিক জান্তা আমলে ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যুদ্ধ করতে গিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হন। এরপর তাঁকে ঢাকা সেনানিবাসে ৯ দিন, কুমিল্লা সেনানিবাসে ৩ দিন এবং চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ১ মাস ২৮ দিন শারীরিক নির্যাতন করে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।

১৯৮০ সালে কারাগার থেকে মুক্তির পর একাধিকবার দিল্লি যান তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি দিল্লির পানদার রোডের বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। এরপর দেশে ফিরে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এতে সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন ডা. এসএ মালেক।

শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কর্মী হিসেবে সবসময় সঙ্গে ছিলেন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে পরিকল্পিত আক্রমণের সময় সার্বক্ষণিক সঙ্গে ছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এসএ মালেক (মহাসচিব, বঙ্গবন্ধু পরিষদ), সাবেক মন্ত্রী মরহুম জহুর আহম্মদ চৌধুরী, মরহুম এমএ আজিজ, মরহুম এমএ হান্নান, মরহুম এমএ মান্নান, মরহুম আক্তারুজ্জামান চৌধুরী (বাবু), মরহুম আতাউর রহমান খান কায়সার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দ আহম্মদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক মেয়র মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে সুদীর্ঘ সময় সংগঠনের কর্মকাণ্ডে ছিলাম।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ ১৯৫৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কারাগার থেকে বি.কম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ডিগ্রি পাস করেন।

তিনি হাটহাজারীর নুর আলী মিয়ার হাট ফরহাদাবাদ গ্রামের হিম্মত মুহুরী বাড়ীর মরহুম নুর হোসেনের সন্তান। তাঁর বাবা ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক উচ্চতর হিসাব কর্মকর্তা।

ইউনুছ বর্তমানে চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ যোদ্ধা ফোরাম ‘৭৫ এর আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষা বোর্ড সদস্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম জেলার আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতির আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম শহর সমাজসেবা প্রকল্প সমন্বয় পরিষদ- ১ এর আজীবন সদস্য এবং পৌর জহুর হকার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

আরএস/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!