‘আলা খা*কির পোয়া’— নেতাকে গাল দিয়ে আগেও ভাইরাল এমপি মোস্তাফিজ

একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এখন নিজ দলেও রয়েছেন তোপের মুখে। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা ইতিমধ্যে প্রকাশ্য সমাবেশে এই সাংসদ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে দল থেকে তাকে বহিস্কারের দাবি তুলেছেন।

জানা গেছে, সাংসদ মোস্তাফিজের কোনো কাজের বিরোধিতা করলেই খোদ নিজ দলের নেতাকর্মীদেরই পড়তে হয় রোষানলে। থানার পুলিশকে ব্যবহার করে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করার বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দলীয় নেতাকর্মীরাই শুধু নয়, সরকারি কর্মকর্তা থেকে সাংবাদিক এমনকি সাধারণ মানুষও তার হয়রানি ও মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর গালাগালের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

সেই ভিডিও ক্লিপে তাকে কথা বলতে দেখা গেছে এভাবে —

চনু! যোগাযোগমন্ত্রী, চ্যাট অইয়্যে দে! সবকিছু আমি নিচ থেকে প্রসেস করে নিয়ে গেছি। একনেকে গিয়ে আমার বন্ধু খোরশেদের দিয়ে পাস করিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে বলে পাস করাইছি।

প্রধানমন্ত্রী বলছে, তুমি নিচ থেকে পাস করে নিয়ে আসো আমি একনেকে আসলে পাস করে দিবো।

লিটন (আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন) কি চনু! ইতার মারে চুদি! নমিনেশন না পাইলে পাবো না! এই কাদেরগ্যা (ওবাইদুল কাদের) চুদানির পোয়ারে আগে নেত্রীর সামনে পিডাবো আমি! আলা খানকির পোয়া!

লিটনের ছেলেকে গুলি মারছি এই জন্য বলছে, তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করতেছো! তোমারে সামনে নমিনেশন দিবো না! আমি বলছি (ওবাইদুল কাদেরকে), আপনার থেকে নমিনেশন নিতে গেলে…

রুমের ভিতর ঢুকে নেত্রীকে কি কি যেন বলেছে আমি দেখি নাই! তারপর তোফায়েল ভাই যখন বের হয়ে আমাকে দেখলো তখন সে আমাকে ডাক দিলো! আমাকে জিজ্ঞাস করলো, তোমাদের বাঁশখালীতে কী হইছে? আমি বললাম, এই এই হইছে। তোফায়েল ভাই আমাকে বললো, তোমার বিরুদ্ধে সে (ওবাইদুল কাদের) এই এই সব বলছে।

চুদানির পোয়া (ওবাইদুল কাদের) পয়সা-মাগী-ইয়াবা সবই খায়। নেত্রীকে আমি ডাইরেক্ট বলছি সংসদে। বলছি, নেত্রী ওবাইদুল কাদেরের আমি কলার ধরবো। নেত্রী বলছে, কেন? কী হইছে ? আমি বলছি, ও (ওবাইদুল কাদের) বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ছোট করছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। সেই জন্যে আপনার সাথে আছি। খেয়ে না খেয়ে। আপনি সেই মর্যাদাটা দিছেন। শেষ বয়সে আমাদেরকে নমিনেশন দিয়েছেন। নইলে আমাদের মতন লোক জীবনে নমিনেশন পাইতাম না।

ইতে (ওবাইদুল কাদের) বাবু মিয়ার জনসভায় বলতেছে , বাবু মিয়া না হলে শেখ রেহানা আপা লন্ডনে বসবাস করতে পারতো না। বাবু মিয়া না হলে নেত্রী রাজনীতি করতে পারতো না। জাবেদ তুমি এগিয়ে যাও।

নেত্রী বলছে, তো! আমার বোন রেহানা তো বাবু মিয়া থেকে পয়সা নেয় নাই! আমি বললাম, এইটা আমি আপনাকে জানিয়ে রাখলাম। আবার বললে আমি কিন্তু কলার ধরে ফেলবো (ওবাইদুল কাদেরের)। নেত্রী বললো, হেই মাথা ঠান্ডা রাখো।

এইসব কথা আমি সংসদে নেত্রীকে ডাইরেক্ট বলছি। আমি বলছি এইগুলো বলা মানে কী! বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ছোট করা। বাবু মিয়া বঙ্গবন্ধুর নাম বেইচা একশো টাকা কামাই করে পাঁচ টাকা এইখানে (পার্টির জন্য) খরচ করছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোন অবদান থাকলে কায়সার মিয়ার আছে। আমি এইসব কথা ডাইরেক্ট বলছি!

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনের সমাবেশে হামলার আগে সাংসদ মোস্তাফিজের কথিত এপিএসসহ অন্যদের সতর্ক অবস্থান
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনের সমাবেশে হামলার আগে সাংসদ মোস্তাফিজের কথিত এপিএসসহ অন্যদের সতর্ক অবস্থান

অভিযোগ একের পর এক
তার বিরুদ্ধে রয়েছে জামায়াত-শিবির তোষণের অভিযোগও। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীর সঙ্গে দক্ষিণ পুঁইছড়ি মদিনাতুল উলুম মোহাম্মদীয়া মাদ্রাসার বার্ষিক সভায় অতিথি হওয়ার জন্য সম্মতি জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের এই সাংসদ। পরে এ নিয়ে সমালোচনা হলে শেষ পর্যন্ত ওই সভা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।

২০১৬ সালের ১ জুন বাঁশখালীর ইউপি নির্বাচনের আগমুহূর্তে পছন্দের প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ না দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে মারধর করেন সাংসদ মোস্তাফিজ। এ ঘটনার পরপরই নির্বাচন কমিশন বাঁশখালীর নির্বাচন স্থগিত করে। সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেয়। এ ঘটনায় জাহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, তার এপিএস তাজুল ইসলাম ও ওলামা লীগ নেতা মৌলানা আক্তারকে আসামি করে মামলা করেন। ওই বছরের ১৮ অক্টোবর বাঁশখালী উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কাছে বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে তথ্য চাইতে গেলে সাংবাদিক রাহুল দাশকে রাহুল দাশকে হত্যার হুমকি দেন। ওই ঘটনায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করে।

২০১৭ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনের অনুসারীদের ওপর গুলি ছোঁড়ার অভিযোগ উঠে। এক ভিডিও ক্লিপে সাংসদ সেই গুলি ছোঁড়ার কথা স্বীকারও করেছেন।

গত ২৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ মারা যাওয়ার পর তাকে গার্ড অব অনার না দেওয়া নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। মৌলভী সৈয়দের পরিবার এজন্য সাংসদ মোস্তাফিজকে দায়ী করেন। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিতে বাঁশখালীতে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারীরা মৌলভী সৈয়দের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করে।

মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অফ অনার না দেওয়ার প্রতিবাদ করায় মৌলভী সৈয়দের ভাইপো সাংবাদিক ফারুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে সাংসদ মোস্তাফিজের এক অনুসারী। মামলার এজাহারে সাংসদের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংবাদিক ফারুকের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয় বলে উল্লেখ করেন বাদি।

সর্বশেষ ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে হামলা চালায় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমানের অনুসারীরা। এ হামলায় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ও চট্টগ্রাম যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৌলভী সৈয়দের পরিবারের তিন সদস্যসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আহত হন। বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এপিএস তাজুল ইসলাম ও বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র সেলিম উল হকের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল সাংসদ মোস্তাফিজের কথিত এপিএস একেএম মোস্তাফিজুর রহমান রাসেলসহ কয়েকজন হামলাকারীকে আটক করে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!