আরিয়ানের স্মৃতি হাতড়ে মা-বাবা কাঁদেন, পুলিশ তাকিয়ে ময়নাতদন্তে

ঠাণ্ডা মাথার খুন, নাকি অসতর্কতার মৃত্যু?

শিশু আরিয়ানের লাশ দীর্ঘ সময় পানিতে থাকায় পচে ফুলে গিয়েছিল। এ কারণে লাশের বাহ্যিক অবস্থা দেখে মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ময়নাতদন্তের ওপর। তবে মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ একাধিক সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করেছে। নজর রাখছে সন্দেহভাজনদের গতিবিধির ওপর।

শিশু আরিয়ানের মৃত্যুতে হালিশহর থানায় দায়ের হওয়া অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়াও নগর পুলিশের পশ্চিম জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার এসএম হুমায়ুন কবির নিজেই বিষয়টি তদারকি করছেন। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আরিয়ান নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর আমরা তার লাশ উদ্ধার করি। তবে তার অভিভাবক এবং পাড়া প্রতিবেশীর সাথে কথা বলে আমরা দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া কোন কিছুই চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। কারণ নিষ্পাপ শিশুটির মৃত্যু রহস্য উদঘাটন যেমন জরুরি, তেমনি নিখুঁত তদন্তও জরুরি।’

গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা থেকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার শাপলা আবাসিক এলাকার বায়তুল হুদা হাজী সুফিয়ান সাবেরা মাদ্রাসা গলি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ৬ বছরের শিশু মেহেরাজ ইসলাম আরিয়ান। ওই রাতেই তার মা মারজান আক্তার পাহাড়তলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে হালিশহর থানা পুলিশ দারুল ফুরকান চট্টগ্রাম নামের এক মাদ্রাসার সীমানা প্রাচীর ঘেঁষা প্লটে জমে থাকা পানি থেকে আরিয়ানের লাশ উদ্ধার করে। ওই প্লটে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় মূলত পানি জমে ছোট ফেনাও জন্মায়। ফেনার কারণেই লাশটি প্রথম থেকে কারো চোখে পড়েনি। যখন লাশটি খুব বেশি পরিমাণ ফুলে ওঠে, তখনই সেটি স্থানীয়দের দৃষ্টিগোচর হয়।

আরিয়ান ঢাকার নাখালপাড়া নিবাসী সাইফুল ইসলাম জুয়েলের ছেলে। আড়াই মাস আগে জুয়েলের কন্যাসন্তান জন্ম নিলে মা-শিশুর নিবিড় যত্নের জন্য তাদেরকে ঢাকা থেকে শ্বশুরালয়ে পাঠিয়ে দেন বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, ‘নানা-নানীর কাছে দুই মাস শিশু আরিয়ান ও তার বোন বেশ আদর-যত্নেই ছিল। বাসা থেকে মাত্র ২০ গজের মতো দূরে আম ও কাঁঠাল গাছের ছায়াশীতল স্থানে একটি লোহার মোটা রডের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে আরিয়ান গলিতে অন্য শিশুদের খেলা, দৌঁড়ঝাপ উপভোগ করতো।’

‘যেন আমার ছেলে নিজেই নিজের সীমা নির্ধারণ করে নিয়েছিল’— যোগ করেন আরিয়ানের পিতা জুয়েল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা ওই গলির পূর্ব মাথায় বায়তুল হুদা হাজী সুফিয়ান সাবেরা মাদ্রাসা ভবন, ৫০ গজের মতো লম্বা পশ্চিম দিকের গলির শেষ মাথাটি ছিল আরিয়ানের সেই সীমানা। মাদ্রাসার পাশ দিয়েই শাপলা আবাসিকের প্রধান গলি। প্রধান গলি থেকে বের হলে মাত্র দুটি প্লট পরেই বিশাল নালা প্রবাহমান। নালার দক্ষিণে দোকানের সারি, তারপর নয়াবাজার থেকে ফইল্যাতলী বাজারগামী সড়ক।

এই সড়কের উত্তর পাশ পাহাড়তলী থানা, দক্ষিণ পাশ হালিশহর থানা। শাপলা আবাসিক এলাকা থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হলেই পাল্টে যায় প্রশাসনিক থানাও। শাপলা আবাসিকের গেইট থেকে একটু পশ্চিম দিকে এলে প্রথমে পড়বে নাথপাড়া বধ্যভূমির গেইট। সেই গেইটের সাথে দুটি দোকান, দোকান ঘেঁষেই দারুল ফুরকান মাদ্রাসা। মাদ্রাসা ভবন ঘেঁষেই আরিয়ানের লাশ পাওয়া প্লট।

মামলার তদন্তে সম্পৃক্ত এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আরিয়ানের পিতার কথা অনুযায়ী আরিয়ান যদি নিজ থেকে নির্ধারণ করা সীমানা অতিক্রম না করে তবে তাকে খুনই করা হয়েছে। তার লাশ উদ্ধার হওয়া স্থানের আশপাশে নেই কোনো খেলার জায়গা। আবার খাবারেরও কোন দোকান নেই যে আরিয়ান গলি থেকে কোন কিছু কিনতে বের হবে। তবে বাসা ও লাশ উদ্ধারের স্থান দুই থানা হওয়াটা মামলার আরেকটা দিকে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তাকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে এমন জায়গায় ফেলা হয়েছে যাতে তৈরি হয় ধুম্রজাল। আবার বেশি দূরে নেওয়াও খুনির পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে সব কিছুই বলা যাবে তদন্ত শেষে।

আরিয়ানের নানার বাড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলায়। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার শাপলা আবাসিকের পাশাপাশি দুটি প্লটে নানা ও নানার বোনের বাড়ি। ছেলেকে খুন করা হয়েছে দাবি করে আরিয়ানের পিতা সাইফুল ইসলাম জুয়েল এই ঘটনায় জড়িত দ্রুত বিচার চেয়েছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!