আমেরিকাজুড়ে শুরু হল সার্বজনীন দুর্গাপূজা

করোনার ভয়াল থাবায় লাখো মানুষের শোকে একাত্ম হয়ে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করার প্রত্যয়ে আমেরিকাজুড়ে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সার্বজনীন দুর্গাপূজা। প্রকৃতির রং বদলের খেলায় ভোরের মিষ্টি আলোয় আমেরিকার ৫০টি রাজ্যের প্রায় প্রতিটি ছোট-বড় শহরের চারশতাধিক মন্দিরকে ঘিরে দূর্গোৎসবের এক অন্যরকম আবহ সৃষ্টি হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের বড় শহর উচিটার পূজার অয়োজক প্রকৌশলী রুপন কান্তি দেব জানান, মহামারি করোনার দাপটের মধ্যেও প্রতি বছরের মত এবারও সারা আমেরিকায় সীমিত পরিসরে পুজার আয়োজন চলছে।

আমেরিকাজুড়ে শুরু হল সার্বজনীন দুর্গাপূজা 1

তিনি জানান, ক্যানসাস ছাড়াও নিউইয়র্ক, ম্যারিল্যান্ড, নিউ জার্সি, আলাবামা, অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, ডেলওয়ার, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আইডাহো, ইন্ডিয়ানা, রুজিয়ানা, মেইনে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে।

শনিবার সকাল দশটায় ক্যানসাস রাজ্যের সবচেয়ে বড় সিটি উচিটা শহরের এনডোভার স্পোর্টস এন্ড রিক্রেশন ক্লাবে শত শত পুজারী দূর্গা দেবীর চরণধূলীতে হাত রেখে প্রণাম, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ও সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী দুর্গাপূজা পালন করে। সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ এ পূজায় যোগ দেয়।

দিনব্যাপী এ বর্ণিল আয়োজনে পুরোহিত ড. দেবব্রত ভাদুরী ও শুভেচ্ছা চক্রবর্তী সকাল থেকে শত শত পুজারী নিয়ে ষষ্টী,সপ্তমী, অষ্টমী-নবমী-দশমীর নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। শনিবার সকাল শুরুতে পুরোহিত ধর্মের মূল বাক্য পাঠ করে তিনি বলেন, আন্তরিক নিষ্ঠার সাথে প্রার্থনা বা পুষ্পাঞ্জলি করলে মনে শুদ্ধি ও উচ্চভাব লাভ করা যায়। সৃষ্টির মূল ধ্বনি ‘ওম’ এর মাঝে সৃষ্টির মূলমন্ত্র রয়েছে বলে পূজারীদের স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

আমেরিকাজুড়ে শুরু হল সার্বজনীন দুর্গাপূজা 2

এ সময় দুর্গার বেদীতে পুষ্পাঞ্জলী, আরতি, মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। দুপুরে ছিল খিচুড়ি, পাঁচমিশালি তরকারি, চাটনি, পাপড়ি এবং মিষ্টিভোজন। আলোক ঝলমলে মঞ্চ ও পূজায় আসা একঝাঁক তরুণ-তরুণীর মনমাতানো যৌথ নৃত্যের পরিবেশন ও সঙ্গীতানুষ্ঠানে পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

দিনভর আনন্দ উৎসব শেষে রাতে ইলিশ মাছ ভাজা ও খাসির রেজালাসহ নানা পদের মুখরোচক বাঙালিয়ানা খাবার দিয়ে চলে ভুরিভোজন চলে। এছাড়াও নানা পদের সন্দেশ, পিঠা-পুলি ও মিষ্টান্ন অনুষ্ঠানের খাবার টেবিলে সাজানো ছিল।

প্রবাস জীবনে নানা ব্যস্ততার মাঝে সারা বছর অপেক্ষার পালা শেষে দুর্গাপূজায় যে যার মত করে আনন্দে মেতে ওঠেন। অনেকে দেবী দূর্গার সামনে সেলফি ছবি তুলতে ভোলেননি। আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে আসা অনেক শিক্ষার্থী ক্যানসাসের ম্যানহাটন এবং টেক্সাস থেকে ছুটে এসেছেন পরিবারের সাথে পূজোয় যোগ দিতে। দিনশেষে দুর্গাদেবীর আশীর্বাদ নিতে আসা পূজার্থীরা দুর্গার বেদীতে শেষ ছোঁয়া নেন।

ষাটোর্ধ্ব আশীষ ঘোষ হাজরা বলেন, ছোটবেলার পূজো আর এখনকার পূজোর আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সেসময় ধর্মীয় আবর্তে কঠোর পূজো হতো। এখন পুজো মানে সার্বজনীন উৎসব— সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!