আমি আনন্দ খুঁজি গবেষণার কাজে

আমি আনন্দ খুঁজি গবেষণার কাজে 1

জুবাইর উদ্দিন, চবি : স্বপ্ন আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সেই স্বপ্ন নিয়েই আমরা বেঁচে থাকি। সেই স্বপ্নের পিছনেই আমাদের অবিরাম ছুটে চলা। সেই স্বপ্নকে ধাওয়া করতে গিয়েই আমরা জীবনে অর্জন করে থাকি কিছু জিনিস বা কিছু খেতাব। আর সেই অর্জন যদি হয় প্রধানমন্ত্রী গোল্ড মেডেল অর্জন তাহলে তো আর কথাই নেই। এটি একসাথে যেমন অনেক আনন্দের বিষয় সেই সাথে বিশাল গৌরবের অর্জন। তেমন একটি গৌরব অর্জনকারী হলেন ফাহমিদা বিনতে ওয়ালী।

তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জীব বিজ্ঞান অনুষদের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজির গ্রাজুয়েট। প্রতিবছর ইউজিসি স্ব স্ব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রেজাল্ট করার জন্য এ পুরষ্কার দেয়া হয়ে থাকে। আর ২০১৭ সালের পুরষ্কার প্রাপ্তদের মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে রাখলেন ইতিহাসের পাতায়।

ফেনীর মেয়ে ফাহমিদা গোল্ডেন জিপিএ -৫ পেয়ে ২০১০ সালে আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং ২০১২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।দু বারেই তিনি বোর্ড সেরা হয়েছিলেন।অনার্স ১ম বর্ষে ৩.৯৩, ২য় বর্ষে ৩.৯১, ৩য় বর্ষে ৩.৯৮ ও ৪র্থ বর্ষে ৪.০০ এবং সম্মিলিত ভাবে সিজিপিএ ৩.৯৫ অর্জন করেন।এই রেজাল্টের মাধ্যমে তিনি জীববিজ্ঞান অনুষদে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১ম ও ২য় বর্ষের সম্মিলিত রেজাল্ট নিয়ে পেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক- দৈনিক আজাদী বৃত্তি।  তাছাড়াও ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে অনার্স শেষ হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের স্কলারশিপ অর্জন করেন।

কথা হচ্ছিল ফাহমিদা বিনতে ওয়ালীর সাথে…

আপনি যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গোল্ড মেডেল নিলেন তখন আপনার অনুভুতি কেমন ছিল?

প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক গ্রহণ করবার অনুভূতিটা আসলে অন্যরকম ছিল। তিনি অনেক যত্ন এবং মমতা নিয়ে আমাদের প্রত্যেককে পদকটি পরিয়ে দিচ্ছিলেন।আমাদের এতদিনের প্রচেষ্টা এবং শ্রমকে এইরকম একটা স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে আমি আসলেই অনেক কৃতজ্ঞ।এটা অনেক বড় একটা পাওয়া।

তা কি করছেন এখন?

-এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি’তে মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) এ পড়ছি। মাস্টার্সের থিওরি পরীক্ষা শেষ।আপাতত থিসিসের কাজ চলছে।গত বৃহস্পতিবার থিসিস সাবমিট করেছি।

আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাই যদিও এটা ভাগ্যের ব্যাপার এবং সেই সাথে অবশ্যই একজন ভালো গবেষক হতে চাই। কারণ গবেষণা জিনিসটা আমাকে খুব টানে। মানুষ কত  কিছুতেই না আনন্দ খোঁজে, আমি আনন্দ

খুঁজি গবেষণার কাজে।

আপনার এত ভালো রেজাল্টের কারণ কি?

-খুব বেশি বা গাধার মতো পড়াশুনা আমি কখনো করিনি করতে পারিও না! তবে আমি যে কাজ করিনা সেটা করিই না, আর যেটা আমাকে করতে হবে সেটা ভালোভাবেই করার চেষ্টা করি। আমি জানি পড়াশুনা আমাকে করতে হবে। তো করতেই যখন হবে তখন ভালোভাবেই করি। ক্লাশে একটা ঘণ্টা আমাদের বসেই থাকতে হয়। তো থাকব যখন স্যারের লেকচারটা একটু মনোযোগ দিয়েই শুনি, খাতায় ভালোভাবে তুলি! শুধু শুধু সময়টা নষ্ট করে তো লাভ নেই। বরং মনোযোগ দিয়ে ক্লাশ লেকচার বুঝে খাতায় তুললে ওখানেই পরীক্ষার পড়া ৫০% হয়ে যায়! পরীক্ষায় কষ্ট অর্ধেক হয়ে যায়। আবার প্র্যাকটিক্যাল খাতা তো আমাকে লিখতেই হবে। তো একটু সুন্দর করে গুছিয়ে একটু বুঝে লিখি! ওখানেই আমার পরীক্ষার পড়া হয়ে যায়। এই ক্লাশ করা খাতা লিখা সবারই করতে হয়। ৫/১০মিনিট কমবেশি সবারই সমান সময় লাগে। কিন্তু তারাই এগিয়ে থাকে যারা বুদ্ধি করে বাধ্যবাধকতার ওই সময়গুলো কাজে লাগায়। আর নিজের সুন্দর করে করা জিনিস দেখলে মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি লাগে। সেটা ক্লাশ খাতাই হোক আর অন্য যেকোন কিছুই
হোক। আর সবার মতো আমিও প্রচুর অবসর পেয়েছি। হয়তো এইসব ছোটখাট ব্যাপারগুলো মেইনটেন করার কারণেই হয়তো অনেক সহপাঠিদের চেয়ে কম পড়াশুনা করেও রেজাল্টটা একটু ভালো হয়েছে ।

আপনার অনুপ্রেরণা কি বা কে বা কারা?

–আমার অনুপ্রেরণার আমার আম্মু আয়েশা বেগম এবং  আব্বু মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ। ছোট থেকেই ভাল ফলাফলের জন্যে আব্বুর মুখের হাসি আর আম্মুর চোখে-মুখে যে আনন্দ দেখতাম সেটা আমার জন্যে অনেক বড় অনুপ্রেরণা। একটা ব্যাপার না বললেই নয়।সেটা হল আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকারা সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা দিয়েই চলেছেন। আমার সব শিক্ষক বিশেষ করে আমার বিভাগের সব শিক্ষকদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আমি সবসময় তাদের কাছে সবরকম সাহায্য এবং অনুপ্রেরণা পেয়েছি যেটা ছাড়া এতদূর আসা হয়ত সম্ভবই ছিল না।

যারা ভালো রেজাল্ট করতে চায় তাদের জন্য কি বলবেন?

-ওই যে উপরের কথাগুলোই আবার বলবো, আমার ভালো রেজাল্টের কারণ। আর শুধু একটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে, তোমার ক্লাশে যারা ভালো রেজাল্ট করে তারা যখন বাসায় রেজাল্ট বলে তখন তাদের বাবা-মা যে খুশিটা হয়, তাদের জায়গায় তোমার বাবা-মার মুখটা একটু বসিয়ে কল্পনা করে দেখো, দেখবে সব পসিবল।

আপনি দেশের জন্য কি করতে চান?

– যাদের টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এই মেডেল নিজের গলায় তুলেছি, তাদের জন্য কিছু করতে চাই। দেশের মানুষের সেবা করতে চাই।

আপনার থিসিস কিভাবে দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখবে?

–আর্সেনিক দূষণ আমাদের দেশের একটা অন্যতম সমস্যা।দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে। আর্সেনিকের প্রভাব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আমাদের শরীরে আর্সেনিক মেটাবলিজমের যে প্রক্রিয়া আছে এর সাথে সংশ্লিষ্ট জিনের পলিমরফিজম এইক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। আর্সেনিকের প্রভাব এবং কোন ধরনের পলিমরফিজম হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে সেটাই বের করবার চেষ্টা করছি। এতে করে আমি মানুষকে সচেতন করতে পারব।

নিজেকে ২০ বছর পর কোথায় দেখতে চান?

– ভালমানের সফল গবেষক হিসেবে। দেশের একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে।যাতে আমাকে দেখে আর কয়েকটা স্টুডেন্ট একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!