‘আমার নামের পাশে কিংবদন্তী লিখো না’

‘আমার নামের পাশে কিংবদন্তী লিখো না’ 1বিনোদন প্রতিদিন : এই জীবনে আমার প্রাপ্তি অনেক রয়েছে। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এটা কম প্রাপ্তি না।

ভালোবাসা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, অক্সিজেন দেয়। অনেকে আমার অভিনয় জীবনকে অনেক বড় করে দেখে এটাও ভালোবাসা, বিশ্বাস করতে অসুবিধা নেই আমার। তাই বলে কেউ যদি আমাকে কিংবদন্তী অভিনেতা বলে তাহলে এতে আমি খুশি হই না।

চলচ্চিত্রে নিজের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে নিজের অভিব্যক্তি এভাবেই প্রকাশ করলেন মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা।

যিনি একজন অভিনেতা হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি প্রযোজক, পরিচালক, রাজনৈতিক ও একজন মুক্তিযোদ্ধা।

সোহেল রানা বলেন, কিংবদন্তী হবে সার্বজনীন বিষয়। আইএম নট লিভিং লিজেন্ড। অনেকেই আইয়ুব বাচ্চুকে কিংবদন্তী বলছে আবার জেমসকেও কিংবদন্তী বলছে।

তারা কি সব শ্রেণির কাছেই কিংবদন্তী? হুম, যারা মিউজিক শোনে তাদের কাছে হয়তো তা। আবার যারা অভিনয় দেখে, সিনেমা দেখে তাদের নিকট অনেকেই কিংবদন্তী, এমনটা রয়েছে। তাই বলে কি সবাই কিংবদন্তী? আমার মৃত্যুর সময় তোমরা নামের পাশে কিংবদন্তী লিখো না। নিজের অপ্রাপ্তি সম্পর্কে এই অভিনেতা বলেন, আমার কণ্ঠ রয়েছে অথচ আমি গাইতে পারি না, এটা আমার অপ্রাপ্তি।

সেদিন টেলিভিশনে দেখলাম একটা মেয়ে গান গাচ্ছে। দেখা গেল একটা গান গেয়েই সে তারকা হয়ে গেল। একটা রিয়েলিটি শো-তে অংশ নিয়ে লাখ লাখ টাকা গাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তাহলে সে সেটার মূল্য কতটুকু বুঝবে? আপনারা মিডিয়া কাভারেজ দিয়ে তাঁদের আকাশে তুলে দিচ্ছেন এজন্যই দ্রুত তারা পড়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ফুটবল খেলতে পারছে না, মিডিয়া তাকে হাইলাইট করে মেসি বানিয়ে দিচ্ছে।

এজন্যই কি চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন? আমি চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে যাই নি, চলচ্চিত্র আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বলা যায় অনেক দূরে চলে গেছে। চলচ্চিত্র হচ্ছে এখন মৃত্যপথযাত্রী রোগী। মানুষের রুচি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটার জন্য দায়ী এখনকার চলচ্চিত্রের যে কাঠামো গড়ে উঠেছে সেটা। এখন সবাই হুট হাট জনপ্রিয় হতে চায়। আমাদের সময় অভিনয় নিয়ে হীনমন্যতা কাজ করতো। আমার বাবা বলতো কি রে এসব কি অভিনয় করিস, যা প্রমথেশের অভিনয় দেখ, কাননবালার অভিনয় দেখ, দেখে শিখ (শেখো) কিছু।

তিনি বলেন, আমরা তখন চেষ্টা করতাম ভালো কিছু করার। এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে শেখার প্রবণতা নেই। হয়তো রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। আগে মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করা হতো কি খেতে চান তারা বলবে পোলাও মাংস, কোরমা। এখন ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞেস করলে বার্গার, পিজা, ফ্রায়েড রাইস, চিকেন ফ্রাই এসব বলবে। এই যে পরিবর্তন এটার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

নিজের অভিনয় জীবন সম্পর্কে আলাপচারিতায় নানা কথা বলেন সোহেল রানা। অভিনয় জীবনের শুরুটা চমকপ্রদ ছিল এমনটা জানিয়ে বলেন, মেলোডি ড্রামা থেকে বের হয়ে প্রথম ন্যাচারাল অভিনয় করি আমি। তখন বলা হতো ‘বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাবৃ’ এটা থেকে বেরিয়ে প্রথম ন্যাচারাল ভাবে ক্যামেরার সামনে কথা বললাম। যেমন ফোন ধরেই বলতাম ‘হ্যাঁ বলো’ খুব ন্যাচারালভাবে বললাম এটা। ক্যামেরার সামনে তখন এটাই প্রতিষ্ঠিত হলো, অভিনয়ের বাইরে এসে স্বাভাবিক কথা বলাটাই বেটার অভিনয় হলো। যদিও তখন পরিচালকেরা এটাকে সহজে হজম করতে পারে নি।

সোশ্যাল মিডিয়া সক্রিয় দেখা যায় এক সময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেতাকে। ফেসবুকেও তাকে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রযুক্তির বাইরে গেলে তো হবে না। যেটা উপকারের সেটার সাথে থাকতে হবে। আমি ফেসবুক তেমন একটা বুঝি না। তবে খুব সাবধানে ঢুকি। আমি জানি এটার যেমন ভালো দিক আছে তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। ফেসবুকে ঢুকে প্রয়োজনীয় মেসেজের উত্তর দেই। ছবিতে বা স্ট্যাটাসে প্রয়োজন হলে মন্তব্য করি এইতো।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!