প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ‘মেয়েরা যে ভালো ফায়ারার হতে পারে সেটিই প্রমাণিত হল। আবার নামটাও আমার নামেই নাম, কাজেই আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে।’
শনিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) ৯৫তম রিক্রুট নবীনদের শপথগ্রহণ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্সে (ভিটিসি) যুক্ত হয়ে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৪ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আনুষ্ঠানিক মোট ২ হাজার ৫২৪ জন রিক্রুট (নারী-পুরুষ) সৈনিকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হন হাসিনা আক্তার বিথি (বক্ষ নং-৬৮৭)। একথা জেনে প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান ওই নারী ফায়ারারকে।
প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে বলেন, ‘সব বিষয়ে সেরা নবীন সৈনিক হিসেবে (বক্ষ নম্বর-৪৩১) রিক্রুট মো. খোকন মোল্লাকে প্রথম স্থান অর্জন করায় শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পাশাপাশি (বক্ষ নং-৬৮৭) রিক্রুট হাসিনা আক্তার বিথি শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হওয়ায় তাকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ওয়েব মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত। শীতের প্রকোপ বাড়ছে। আমেরিকা ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে করোনা আবার সংক্রমিত হচ্ছে নতুনভাবে। আপনারা প্রত্যেকেই নিজেরা সুরক্ষিত থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস যাতে আমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, এজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। করোনার ধাক্কা সামলাতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। করোনারোগী শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ দফা নির্দেশনা জারি করি। ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তৃতা দেন। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার থেকে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। তিনি নবীন সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজও উপভোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর এই বাহিনীর তৃতীয় রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধৃত করেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আজ আপনাদের কাছে আমি অনেক বড় কর্তব্য দিয়েছি, অনেক বড় কাজ দিয়েছি। এ কাজ হলো চোরাচালানি বন্ধ করা। তোমাদের কাছে আমার হুকুম, স্মাগলিং বন্ধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তোমরা পারবা। এ বিশ্বাস তোমাদের ওপর আমার আছে। আশা করি, তোমরা স্মরণ রাখবা। মনে রাখতে হবে, স্মাগলারের কোনো জাত নাই, ধর্ম নাই, তারা মানুষ নামের নরপশু। তারা এ দেশের সম্পদকে বিদেশে চালান দেয় সামান্য অর্থের লোভে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বক্তব্যে জাতির পিতার যে নির্দেশনা রয়েছে, আমি আশা করি, আপনারা তা মেনে চলবেন। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি এই অপকর্মগুলো রোধ করতে আপনারা আন্তরিক ভাবে কাজ করবেন। কারণ, এই কথাগুলো এখনো প্রাসঙ্গিক।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবিকে আরও শক্তিশালী করা এবং সীমান্তের প্রতিটি জায়গায় যেন তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘বর্ডার গার্ড ভিশন-২০৪১’ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ, তার সরকার এখন বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছে। বাহিনীতে হেলিকপ্টারের সঙ্গে নদীমাতৃক এই দেশের সীমান্ত প্রহরায় নৌযান সংযুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে, জলে, স্থলে এবং আকাশপথে—সর্বত্রই বিজিবির এখন বিচরণ রয়েছে। ১৫ হাজার জনবলের ধাপে ধাপে অন্তর্ভুক্তি এবং প্রশিক্ষণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভিল্যান্স ইক্যুইপমেন্ট স্থাপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, ভেহিকেল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করার মাধ্যমে বিজিবির উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পাশাপাশি বিজিবির সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবায় বিজিবির পাঁচটি হাসপাতালকে আরও উন্নত করা হয়েছে।
সিপি