আবুধাবির আইসিইউতে ৪ মাস কাটিয়ে করোনামুক্ত চট্টগ্রামের ইসমাইল, ডাক্তাররাও অবাক

আরব আমিরাতে এমন ঘটনা এই প্রথম

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির আইসিইউতে ১১৫ দিন থাকার পর বিস্ময়করভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশি প্রবাসী আবু তাহের ইসমাইল। চট্টগ্রামের লোক ইসমাইল আবুধাবিতে একটি মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপের মালিক।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ সোমবার (৫ অক্টোবর) জানিয়েছে, আরব আমিরাতে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৫৫ বছর বয়সী ইসমাইলই জটিল সব রোগ নিয়েও দীর্ঘতম সময় হাসপাতালের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) থেকে সুস্থ হলেন।

আবুধাবির লাইফ কেয়ার হাসপাতালের নেফ্রোলজিস্ট ডা. আবিশ পিল্লাই জানান, ইসমাইলের ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন ছিল। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তার কিডনিতেও জটিলতা তৈরি হয়।

ওই চিকিৎসক বলেন, ‘এই ধরনের রোগীদের মধ্যে ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশই মারা যায়। তাই আজ তাকে উঠে দাঁড়াতে দেখে দারুণ লেগেছে। আমরা আশা করি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরও সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

ইসমাইলের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক জানান, অসুস্থ হওয়ার ১০ দিন পর তিনি তার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এর আগে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে খুব দুর্বল বোধ করছিলেন। ক্ষুধা ছিল না তার। পরে তীব্র শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা শুরু হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

২০ বছর বয়সী আবু বকর সিদ্দিক জানান, তার বাবার অবস্থা দেশের চট্টগ্রামে থাকা তার মা ও দুই ভাইকে জানানোর মতো সাহস তার ছিল না।

ইসমাইলের ছেলে বলেন, ‘আমি বাবার অবস্থা নিয়ে সময়ে সময়ে তাদের সাধারণ তথ্য দিতাম, কিন্তু তিনি কতটুকু অসুস্থ তা জানানোর মতো সাহস করে উঠতে পারিনি। আমি অনেক ভয়ে ছিলাম, মন খারাপ ছিল। কথা বলা বা ভরসা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। আমি শুধুমাত্র আল্লাহকে ধন্যবাদ দেই যে আমার বাবা ফিরে এসেছেন।’

লাইফ কেয়ার হাসপাতালের জরুরি মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডা. কার্তিক চিন্নিয়াহ জানান, ইসমাইলকে হাসপাতালে আনার পর একটি পরীক্ষা করেই তৎক্ষণাৎ কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়। সে সময় তার জ্বর ও কাশি ছিল। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল ৮০র নিচে।

মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডা. কার্তিক চিন্নিয়াহর সঙ্গে আবু তাহের ইসমাইল।
মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডা. কার্তিক চিন্নিয়াহর সঙ্গে আবু তাহের ইসমাইল।

তিনি জানান, ইসমাইলকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড কোভিড-১৯ চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ১০ দিনের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ও স্টেম সেলের দুটি ডোজ।

এরপর আইসিইউতে প্রায় চার মাস রেখে চিকিৎসার পর ইসমাইলকে ৩১ আগস্ট হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়া হয়। তিনি নিজেই এখন খেতে ও হাঁটতে পারছেন বলে চিকিৎসকরা জানান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!