আবার ডেঙ্গু, হাসপাতালে ভর্তি ১০ রোগীর ৯ জনই বিশ্বকলোনির!

বছরের মাঝামাঝিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো শোরগোল ফেলেছিল চসিক। এ প্রচারণার রেশ থাকে বেশকিছু দিন। বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা, লিফলেট বিতরণ, মাইকিংও চলে হুলস্থুল। কিন্তু হঠাৎ থেমে গিয়ে সব চুপচাপ। পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ভেবেই নীরবতা পালন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া ২ হাজার ২২০ জন রোগীর ভেতর ২০০ জনই আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনি আর ফয়’স লেক এলাকার। এই সংখ্যাটা বেশি না হলেও চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে এক এলাকায় এর আগে এতো রোগী শনাক্ত হয়নি। এর আগে ফয়’স লেক ও ঝাউতলা এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুজন রোগী মারা যায়। একই এলাকায় প্রায় ২০০ রোগী শনাক্ত হওয়ায় চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে না এলে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না বলেও মত দেন চট্টগ্রামের সদ্য বদলি হওয়া সিভিল সার্জন ডা .আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।

এদিকে, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ হিসেবে দেখছেন, বিশ্বকলোনি এলাকায় চসিকের প্রচারণায় অবহেলা এবং ঢিলেঢালা মনোভাব। এছাড়াও ওই এলাকায় অবস্থানরত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের যাদের ডেঙ্গু বিষয়ক পর্যাপ্ত ধারণা নেই এবং অসচেতন। যার ফলে প্রতিদিনই ওই এলাকা থেকে শনাক্ত হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।

গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ৯ জন, ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে ১ জন। এদের মধ্যে ৯ জনই বিশ্বকলোনির বাসিন্দা। তবে উপজেলায় কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নেই। এছাড়া বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন ৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী।

এ প্রসঙ্গে সদ্য বদলি হওয়া সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু প্রায় কমে গিয়েছিল কিন্তু একটা এলাকার জন্য আমরা কমাতে পারছি না। সিটি করপোরেশন কেবল মশা মারলে তো কাজ হবে না। এলাকাবাসীকে সচেতন করতে হবে। ঐ এলাকার বাসিন্দারা সচেতন না বলেই দিন দিন প্রকোপ বাড়ছে। রোগীরা ভর্তি হলেইতো আমরা চিকিৎসা দিবো। কিন্তু যাতে আক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে সিটি করপোরেশনকে। নতুন সিভিল সার্জনকে সার্বিক অবস্থা বুঝিয়ে দিয়ে যাবো। আমি সিটি করপোরেশনকে বারবার জানিয়েছি ওই এলাকা ঝুঁকির মধ্যে আছে। চসিকের প্রচার প্রচারণা না থাকায় অবস্থার অবনতি হচ্ছে।’

বিশ্ব কলোনি এলাকার বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া ঈশিকা চৌধুরী বলেন, যারা বিল্ডিংয়ে থাকে তারা হয়তো নিজের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে কিন্তু যারা সেমিপাকা ঘরে থাকে বা আরও করুণ অবস্থায় থাকে তারা জানেই না ডেঙ্গুর অবস্থা। তাছাড়া আমি এই এলাকায় সেই ছোটবেলা থেকে আছি। চসিকের প্রচার প্রচারণা তেমন চোখেই পড়েনি। মশার ওষুধ ছিটালেও তা দায়সারা।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা.নুরুল হায়দার বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বলা মুশকিল। কেননা বিশ্ব কলোনি এলাকাতেই প্রতিদিন শনাক্ত হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। কিন্তু অন্য জায়গায় তেমন একটা প্রভাব নেই।’

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পরবর্তী ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ আসলে বুলবুলের তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। তাছাড়া বুলবুলের পর বৃষ্টি বাদল হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাক্তার আখতারুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি যে এখন যারা আক্রান্ত হয়ে আসেন তারা খুব খারাপ অবস্থা নিয়ে আসেন। জাতীয়ভাবে প্রথমদিকে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর চেয়েও এখন বেড়েছে। তার বড় কারণ হলো যে এটার তেমন উপসর্গ দেখা যায় না। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমলেও শঙ্কামুক্ত নয়। শেষ সময় এলে মানুষ গুরুত্ব দেয় না ফলে তখনই ঝামেলাটা হয়। আর অনেকে মোটেও সচেতন না।’

জনস্বার্থ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের এখানকার সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা ঢাকার পরিস্থিতি দেখে যেভাবে হৈচৈ করেছিল সেভাবে কাজ করেনি। সচেতনতার স্বাক্ষর রাখার জন্য যত না প্রচার প্রচারণার দিকে জোর দিয়েছে কিন্তু করণীয় কাজটা সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে করেনি। ডেঙ্গু বা এডিস মশা জন্মাবার পরিস্থিতি যতক্ষণ আছে ততক্ষণ সচেতন থাকা লাগবে।’

তবে চসিকের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে সপক্ষে বক্তব্য দেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহিরুল আলম জসিম বলেন, ‘আমরা সবসময়ই প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি। এখনও এই কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া পুরো ওয়ার্ডে মশক নিধন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। আমরা ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকায় বেশ কয়েকবার ওষুধ ছিটিয়েছি।’

চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম আকতার চৌধুরীর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রতিবারই লাইন কেটে দেন।

এদিকে বিগত তিন বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে চট্টগ্রামে এ বছরেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত ২ হাজার ২২০ জন রোগী শনাক্ত হয়।

এসআর/এসবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!