আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের শুরুটা ভালো করতে চান সাকিব
আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাট আর বল যাই করুক শুরুটা ভালো করতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ভালো শুরু করতে পারলে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে চলে আসবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সাকিব নিজের ও দলের পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
এ বছর বাংলাদেশ দেশের মাঠে একটিই মাত্র টেস্ট খেলবে, সেটি এই আফগানিস্তানের বিপক্ষে। লম্বা বিরতিতে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে ফেরা, সামনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ তো আছেই। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিততে চান আরও একটি কারণে, ‘গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সময়টা ভালো কাটছে না। হাইপারফরম্যান্স দল, এ দল—কোথাও আমরা খুব একটা ভালো করতে পারেনি। শুধু অনূর্ধ্ব-১৯ ইংল্যান্ডে ফাইনাল (ত্রিদেশীয় সিরিজে) খেলেছে। এই টেস্ট আমাদের কাছে তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ, খুব ভালো ভাবে জিতলে অনেক কিছু আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।’
ইমার্জিং দল সিরিজ হারছে শ্রীলঙ্কার কাছে, ‘এ’ দল সিরিজ হারছে আফগানদের কাছে। ভারত সফরে ফাইনালে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একাদশ। সবচেয়ে বাজে সময় কাটাচ্ছে জাতীয় দল। সাকিব দুর্দান্ত খেললেও তাঁর দল বিশ্বকাপে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো করতে পারেনি। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরটা গেছে আরও বাজে। পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে না, এর মধ্যে নানা কথা ছড়িয়েছে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে। এ নিয়ে সাকিব-মাহমুদউল্লাহকে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিতে হয়েছে। শুধু খেলোয়াড় নন, বিতর্ক হয়েছে কোচ নিয়েও। আগের কোচ স্টিভ রোডসকে আকস্মিক বিদায় দেওয়া হয়েছে। নতুন কোচিং স্টাফ যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশ দলের এ রূপান্তরকালীন সময়ে আবার নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়েও।
সাকিব মনে করেন, একটা জয় পারে দেশের ক্রিকেটের নেতিবাচক সব আলোচনা পেছনে ফেলতে। কিন্তু ফলটা যদি হয় উল্টো? আফগানিস্তানের মতো র্যাঙ্কিংয়ের নিচের দল, টেস্ট ক্রিকেটের নবীনতম দলের বিপক্ষে জিতলে খুব একটা আলোচনা বা প্রশংসা হবে না। কিন্তু উল্টো ফল হলেই যে সমালোচনার অভাব হবে না! সংবাদমাধ্যম কিংবা সাধারণ দর্শকেরা প্রশংসা করল না সমালোচনা করল, সেটি নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন সাকিব, ‘(আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে জিতলে) প্রশংসা হয় না এটা মনে হয় ভুল ধারণা। আমরা ক্রিকেটাররা জানি এটা কত বড় ম্যাচ, জিততে হলে কতটা ভালো করতে হয় ও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আমরা নিজেদের সেভাবেই উৎসাহিত করি। মানুষ কিংবা আপনারা কতটা প্রশংসা করেন না করেন এটা আমাদের কাছে বড় ব্যাপার নয়।’
সাকিব সবশেষ টেস্ট খেলেছেন গত বছরের নভেম্বরে। ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতেছিল ইনিংস ও ১৮৪ রানে। বল হাতে দুই ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি এক ইনিংসে ব্যাট করে ৮০ রান করেছিলেন সাকিব। তারপর আর টেস্ট না খেলায় সবশেষ প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়েন।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে উঠে এলো সেই প্রসঙ্গও। যেখানে সাকিব বললেন, ‘আমার মনে একটা জিনিসই কাজ করে, সেটা হল দলের জয়ে কতটুকু অবদান রাখতে পারলাম। সেটা যদি স্বাভাবিক রাখতে পারি, তাহলে র্যাঙ্কিংগুলো আপনা আপনিই বাড়বে। এ কারণে র্যাঙ্কিং নিয়ে আমাকে কখনোই চিন্তা করতে হয় না। সবসময়ই চিন্তা থাকে, দলের প্রয়োজনে যেন ভালো কিছু করতে পারি। সেই ভালোর কিছু সঙ্গে যদি অন্যকিছু (র্যাঙ্কিং) হয়, তাহলে সেটাও ভালো।’
সাকিব কথা বলেছেন টস, পিচ, দলসহ আরও অনেকগুলো বিষয়ে। ঘরের মাঠে খেলা। সেখানে টস একটা ফ্যাক্টর। টস জিতলে কোনো অ্যাডভান্টেজ আছে কি? সাকিবের উত্তর, ‘এশিয়াতে টসটা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ হয়। তাতে অ্যাডভান্টেজ হয়তো একটু থাকবে। কিন্তু, সেটা থাকুক আর নাই থাকুক, গুরুত্বপূর্ণ হল বোলিং বা ব্যাটিংয়ে শুরুটা যেন ভালো করতে পারি।’ শুধু ভালো শুরু করলেই হবে না, সাকিব বলছেন ওই ভালো শুরুটা ধরে রাখতে হবে।
প্রশ্ন ছিল চট্টগ্রামের পিচ নিয়েও। বন্দরনগরীর পিচ কেমন হতে পারে? সাকিব জানালেন, ‘চট্টগ্রামের পিচ উপরে যেমনটা দেখা যায়, অধিকাংশ সময়ই তেমন হয় না। সুতরাং আমরা ওপেন মাইন্ডে আছি, পিচ যে ধরনেরই হোক না কেনো, আমরা সেটা সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব। সেটা যদি করতে পারি, তাহলে আমরা ভালো কিছু করতে পারব।’
পেস আক্রমণে দীর্ঘদিন ভুগছে বাংলাদেশ। স্পিনেও যথেষ্ট লড়তে হয় সাফল্য আনতে। টেস্টে প্রতিপক্ষকে দুবার অলআউট করতে না পারার মাশুল গুনতে হয় হরহামেশাই। সাকিব তাই দলের বোলিং নিয়ে সামর্থ্য ও প্রয়োগ ক্ষমতার সমন্বয়ের কথাই টেনে আনলেন। ‘দলে যত ভালো বোলারই থাক না কেনো, যতক্ষণ না ২০ উইকেট নিতে পারছি, জেতার সুযোগ নাই। সেইসঙ্গে ব্যাটসম্যানদের চিন্তায় থাকবে, বোলাররা প্রতিপক্ষকে যত কম রানে অলআউট করতে পারে এবং তারা যত বেশি লিড এনে দিতে পারেন। এরচেয়ে বেশি কিছু চিন্তা করছি না। আমাদের মূল কাজ হল বেসিক কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে করা।’
নিজের দলের সঙ্গে প্রতিপক্ষের বিষয়েও সতর্ক করেছেন সাকিব। আফগানিস্তান দলে কোয়ালিটি সম্পন্ন বেশ কয়েকজন স্পিনার রয়েছেন। সেইসঙ্গে তাদের পেস আক্রমণও বেশ শক্তিশালী। ব্যাটিংয়েও লম্বা সময় ক্রিজে থাকার ব্যাটসম্যান রয়েছেন। ব্যাটিং-বোলিং উভয় দিক থেকেই বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন টাইগার টেস্ট দলপতি। তবে সাকিব মনে করেন চট্টগ্রাম টেস্টে আসল পার্থক্যটা গড়ে দিবে ব্যাটসম্যানরা।
বুধবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল না। অনেক অনুশীলন হয়েছে, গত দুই সপ্তাহে সর্বোচ্চ প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম টেস্টের আগের দিন দলের অনুশীলন তাই করে দেওয়া হয়েছে ‘ঐচ্ছিক’। ফাঁকা নেট পেয়ে ভালোভাবে ব্যাটিং অনুশীলন করে নিলেন বোলার তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ, নাঈম হাসান ও ইবাদত হোসেন। মাঝ উইকেটের পাশে আরেকবার হাত ঘুরিয়ে নিলেন দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। প্রস্তুতি শেষ—এবার লড়াইয়ের অপেক্ষা, যে লড়াই শুরু হবে বৃহস্পতিবার সকাল দশটায়।