আপনি নিজেই তো সন্ত্রাস— মেয়রকে দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন দিয়াজের মা (ভিডিওসহ)

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীকে হত্যার জন্য চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকেই দায়ী করেছেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। তিনি বললেন, মেয়র দিয়াজকে একবার নয় ৪ বার হত্যা করেছেন।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মহানগর কৃষক লীগ আয়োজিত দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকবিরোধী আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন জাহেদা আমিন চৌধুরী। এ সময় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। সেখানে নেতাকর্মীদেরকে শপথবাক্য পাঠ করান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে জাহেদা আমিন চৌধুরী যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখনই অনুষ্ঠানস্থলে মেয়র প্রবেশ করেন। তখন মেয়র নাছিরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলে উঠেন, ‘দুর্নীতি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এখানে শপথ নেওয়া হচ্ছে, আপনি নিজেই তো একজন সন্ত্রাস। সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আপনার জন্যই আমার সন্তানকে এক বারের জায়গায় ৪ বার হত্যা করা হয়েছে। চিটাগং মেডিকেলের রিপোর্টটাও আপনার নেতৃত্বে দেওয়া হয়েছে।’

ক্ষুব্ধ জাহেদা আমিন এ সময় বলেন, ‘ঘর ভাঙচুরের পর আমি আপনার কাছে গিয়েছিলাম। আপনি একজন মেয়র হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কেন দিয়াজকে চাকরি করার জন্য চাপ দিচ্ছি। আপনি তাকে ২৩ কোটি টাকার কাজ দেবেন।’

বক্তব্যের একপর্যায়ে জাহেদা আমিনের কাছে থেকে মাইক কেড়ে নেওয়া হয়। পরে মেয়র নাছিরের নেতৃত্বে মাদক সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শপথ বর্জন করে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন তিনি। বাইরে দাঁড়িয়ে তখন বিলাপ করছিলেন জাহেদা আমিন। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে মেয়র নাছিরের সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছিলেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কৃষক লীগের সভা থেকে বের করে দেওয়ার পর বাইরে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কৃষক লীগের সভা থেকে বের করে দেওয়ার পর বাইরে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন।

ওই সময়ের একটি ভিডিও চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে। যেখানে দিয়াজের মাকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা আমার বক্তব্য রেকর্ড করছেন কিনা জানি না। আপনারা আমার বক্তব্য আজকে তুলে ধরবেন। আজকে আবেগের মোহে এসব মায়ের সন্তানরা তাদের কপালে কী আছে। দিয়াজের মত একদিন হারিয়ে গেলে তাদের জন্য কথা বলবে না। ‘একটি নাম শোন নবীন আ জ ম নাছির উদ্দিন’— দিয়াজের বানানো শ্লোগান, দিয়াজের তোলা শ্লোগান। আহারে দিয়াজ! দিয়াজকে বলেছিলাম এমন একটা নেতার পাশ ধরেছিস, যে মানুষকে উঠতে দেয় না। মানুষকে উঠতে গেলে হত্যা করে। দিয়াজ বলেছে মা মানুষের কথায় কান দিয়েন না। উনি আমাকে নিজের সন্তানের থেকেও বেশি ভালবাসে। আমার সন্তান বিশ্বাস করে নাই মার কথা।”

পরে জাহেদা আমিনকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন তিনি। জাহেদা আমিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেয়রের বক্তব্যের সময় আমি বাইরে বের হয়ে আসি। তখন মেয়রের পিএস রায়হান ইউসুফসহ নীল শার্ট পড়া একজন আমাকে হুমকি দেন। তারা আমাকে বলেন আমি যেন সিএনজি নিয়ে সেখান থেকে চলে যাই। না হলে সমস্যা হবে। আমি তখন বলেছি কী করবেন, মেরে ফেলবেন? মেরে ফেলেন দিয়াজের পুরো পরিবারকে মেরে ফেলেন। তখন নীল শার্ট পরা লোকটি আমাকে বলে উঠে, ‘ঘরে মেয়ে ঢুকাইছিলি কেন?’ আমি উত্তরে বলেছি মেয়েঘটিত কারণে দিয়াজ খুন হয়ে থাকলে সেটার প্রমাণ দেন। সেটারও বিচার হোক।’

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র চন্দ। চট্টগ্রাম মহানগর কৃষক লীগের সভাপতি এডভোকেট আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আনোয়ার হাফিজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন উত্তর ক্যাম্পাসে নিজ বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজের লাশ। ঘটনার তিন দিন পর (২৩ নভেম্বর) ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদি হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন এক সহকারী প্রক্টর, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সংগঠনটির বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। দিয়াজের মায়ের আপত্তির ফলে আদালত সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এরপর দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দেওয়া দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দিয়াজের শরীরে হত্যার হত্যার আলামত রয়েছে বলা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিয়াজের মায়ের করা এজাহার হত্যা মামলা হিসেবে নিতে হাটহাজারী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!