আপত্তির মুখে বাড়লো আইসিডিতে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং চার্জ

ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখেই বাড়লো আমদানি রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং চার্জ। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বেসরকারি আইসিডিগুলোর (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) সংগঠন বিকডা (বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিশেন) মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) থেকে সব ধরনের সেবার চার্জ ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে। তবে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন চার্জ বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে বন্দরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে আইসিডিতে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১০ শতাংশ বর্ধিত ট্যারিফ আদায়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ। যদিও একমাত্র বিকডা ছাড়া আর কেউ ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি।

তারও আগে আলোচনা চলাকালীন সিদ্ধান্ত আসার আগেই হঠাৎ করে গত ১৬ আগস্ট বেসরকারি আইসিডিসমূহে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সব ধরনের সেবার চার্জ বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিশেন (বিকডা)। ওই দিন শুরুতে ২২-২৫ শতাংশ চার্জ বাড়ালেও পরে ১২ শতাংশ চার্জ বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিকডা। এতে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১০ শতাংশ চার্জ বৃদ্ধি করায় মঙ্গলবার থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী ২০ ফুট কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ ৩ হাজার ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৯৬০ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে ৪০ ফুট কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ ৪ হাজার ৮০০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ হাজার ২৮০ টাকা। প্রতিদিনের গ্রাউন্ড রেন্ট চার্জ ২০ ফুট কনটেইনারে ১০০ এর স্থলে ১১০ টাকা, ৪০ ফুট কনটেইনারে ২০০ এর স্থলে ২২০ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। ল্যান্ডিং চার্জ প্রতি টন ১৮০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৯৮ টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী হাওলাদার বলেন, ‘আমরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। এভাবেই চার্জ বাড়িয়ে দেওয়ার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। বিজিএমএইএ, বিকেএমইএ কেউ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। সবার আপত্তি সত্বেও বিকডা চার্জ বাড়িয়েছে। চার্জ বাড়নোর বিষয়ে ট্যারিফ কমিটি আছে, মন্ত্রণালয়ের কমিটি আছে। তারা যে সিদ্ধান্ত দিবে, আমরা মেনে নেবো।’

বিকডার সচিব মো. রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইসিডিতে খরচ বেড়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর একটি সভায় বন্দর চেয়ারম্যান ১০ শতাংশ চার্জ বাড়ানো সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সিদ্ধান্ত অনুসারে মঙ্গলবার থেকে আইসিডিতে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং চার্জ ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে বন্দরের একটি কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছিল, ২০১০ হতে ২০১৫ পর্যন্ত পাঁচ বছরে আইসিডিসমূহের ৪২ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই তখন মাত্র ২০ শতাংশ চার্জ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। চবক হতে আশ্বাস পেয়েছিলাম, ২০১৭ সাল হতে অবশিষ্ট ২২ শতাংশ চার্জ বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু সেটা এখনো কার্যকর করা হয়নি। অনেক কমিটি হলেও কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। আমরা চলতি বছরের ১ এপ্রিল, ১ আগস্ট ও ১৬ আগস্ট চার্জ বৃদ্ধি করি। কিন্তু সেটাও তারা মেনে নেয়নি।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমকে সহজ করতে বেসরকারি আইসিডিসমূহ স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে মোট ১৯টি বেসরকারি আইসিডি রয়েছে। এসব আইসিডি থেকে গার্মেন্টস রপ্তানির শতভাগ পণ্য হ্যান্ডেলিং করার পাশাপাশি ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য হ্যান্ডেলিং করা হয়। বেসরকারি আইসিডিগুলোতে নির্দিষ্ট পরিমাণে চার্জ আদায় করে এসব পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে সব ধরনের সেবা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে যাওয়া, পণ্য খালাস করা, কনটেইনারে বোঝাই করা, ডেলিভারি দেয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের কার্যক্রম বেসরকারি আইসিডিগুলো থেকে করা হয়ে থাকে। ১৯টি আইসিডিতে সামগ্রিকভাবে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, আইসিডিসমূহের বর্ধিত ট্যারিফ/চার্জ গত ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছিল বিকডা। গত ২৫ জুলাই বিভিন্ন আইসিডিতে সেবাগ্রহীতাদের কাছে চিঠি দিয়ে ১ আগস্ট থেকে খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ও রপ্তানি পণ্য স্টাফিংয়ের ক্ষেত্রে বর্ধিত হারে চার্জ আদায় করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল বিকডা। নতুন করে ১ আগস্ট থেকে বিকডা কর্তৃক চার্জ বৃদ্ধির ঘোষণার আপত্তি জানিয়ে বিজিএমইএ, চট্টগ্রাম চেম্বার, বাফা, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে পক্ষ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১ আগস্ট দুপুরে অনুষ্ঠিত বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভায় ওই সিদ্ধান্ত স্থগিতের ঘোষণা করা হয়। এর আগেও একবার গত ১ এপ্রিল থেকে চার্জ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিল বিকডা। শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অসোসিয়েশন এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের আপত্তির কারণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সেবারও বিকডার সিদ্ধান্ত স্থগিত করার আদেশ দেয়।

এমএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!