‘আদব-কায়দা জানস না, বেয়াদব কোথাকার’— ইউএনওকে এমপি নদভী

সাতকানিয়া উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভা

চট্টগ্রাম ১৫ নম্বর আসন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া (আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নদভীর হুংকারে রঙ হারিয়েছে সাতকানিয়া উপজেলা মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভা। নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ২ ঘণ্টা পরে সভাস্থলে গিয়েও তাকে রিসিভ না করে সভা শুরু করার কারণে সদ্য নিয়োগ পাওয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে আলমের উপর চড়াও হন তিনি। এ সময় তাকে ছাড়া কেন সভা শুরু করা হলো এর কারণ জানতে চেয়ে নুরে আলমকে বলেছেন, ‘তুই কিসের ইউএনও তোকে কে ইউএনও বানিয়েছে, বেয়াদব কোথাকার, আদব কায়দা জানোস না?’

তবে এ ব্যাপারে নুরে আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-‘তেমন না, ছোট্ট একটি ঘটনা ঘটেছে। পরে অবশ্য সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে।’

সভায় উপস্থিত বেশ কয়েজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পুর্বনির্ধারিত সময় দুপুর আড়াইটায় সাতকানিয়া উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভা শুরু হয়। সভা শুরুর প্রায় ২ঘণ্টা পর বিকাল সাড়ে ৪টায় সভায় যোগ দিতে আসেন চট্টগ্রাম ১৫ নম্বর আসন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া (আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নদভী। সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী শুরু থেকে সভায় থাকলেও নদভী আসেন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে। তখন সভা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সংসদ সদস্য নদভী ভেতরে ঢুকে দেখেন সভাপতির পাশে তার জন্য সংরক্ষিত চেয়ার খালি নেই। তিনি কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর চেয়ার খালি করে তাকে বসানো হয়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সদ্য নিয়োগ পাওয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে আলমের উপর চড়াও হয়ে জানতে চান তাকে রিসিভ করা হয়নি কেন? এ সময় ইউএনওকে গালাগাল করেন এমপি। উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ মোতালেব এমপি নদভীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন এসময়।

উপজেলা চেয়ারম্যান এমপি নদভীকে বিষয়টি বুঝিয়ে শান্ত হবার আহ্বান জানান। কিন্তু এমপি নদভী উপজেলা চেয়ারম্যানকে এ ব্যাপারে ‘নাক না গলাতে’ বললে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে সভায় উপস্থিত বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা সংসদ সদস্য নদভীর এমন মারমুখী ও অশোভন আচরণের প্রতিবাদে একযোগে সভা স্থল ত্যাগ করেন। তখন সভার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সভা স্থল ত্যাগ করা চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সংসদ সদস্যের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তার এ ধরনের মারমুখী ও সম্মান হানিকর আচরণ পরিহার না করলে ভবিষ্যতেও সভা বর্জন করবেন বলে জানান। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ১৪ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দায়সারা ভাবে মাসিক সমন্বয় সভা শেষ হয়।

ওই সভায় উপাস্থিত ছিলেন সাতকানিয়ার প্যানেল চেয়ারম্যান আঞ্জুমান আরা। এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন ‘আসলে সভায় ইউএনও সাহেব আসছে নতুন মানুষ, এমপি মহোদয় (নদভী) লেইটে আসছেন কিন্তু আমরা তো সবাই সভায় মশগুল ছিলাম। তখন উনাকে (এমপি) রিসিভ করা হয়নি কেন এইটা নিয়ে একটু বিশৃঙ্খলা হয়েছে। তবে পরে সবকিছু মিটমাট হয়ে গেছে।’

উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব আহমেদ কোনও মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে সভায় উপস্থিত অন্যদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। সদ্য নিয়োগ পাওয়া ইউএনওকে ‘গালি গালাজ’ করার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সভায় উপস্তিত অন্যান্য চেয়ারম্যানরাও সরাসরি বক্তব্য জানাতে রাজি হননি কেউ।

সাতকানিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি পড়েছে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে। ওই আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। বাকি ছয়টি আসন পড়েছে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনে। ওই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম চৌধুরী। সাতকানিয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে দুই সাংসদই মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে আছেন।

এ প্রসঙ্গে সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী বলেছেন, ‘উপজেলা পরিষদে গেলে আগের সব ইউএনও বাইরে বের হয়ে সম্মান জানালেও এই ইউএনও সম্মান তো জানাননি, আবার ভেতরে ঢুকে দেখি, এমপির চেয়ারে উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব সাহেব বসে আছেন। তাই তার কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছি। আদব কায়দার একটা বিষয় আছে।’

এএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!