আইসোলেশন ওয়ার্ডেরই ‘চিকিৎসা’ দরকার চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে

করোনার আক্রান্তের হটস্পর্ট হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের চকরিয়া। এরই মধ্যে এই উপজেলায় ১৪২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্তদের জন্য চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু করা হয়েছে ৫০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড। কিন্তু এই ওয়ার্ডের চিকিৎসা-খাবার ও বিদ্যুৎ নিয়ে রোগীদের রয়েছে নানা অভিযোগ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়ায় বুধবার (২৬ মে) পর্যন্ত ১৪২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৯ জন। বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬০ জন। সুস্থ হয়ে হয়েছেন ৪৩ জন। হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দুইজন। নার্স রয়েছে তিনজন।

অভিযোগ রয়েছে, রোগী ভর্তির পর ঠিকমত খোঁজ-খবর নেন না চিকিৎসক-নার্সরা। হাসপাতালের আইসোলেশনে রোগী আসলে তাদেরকে শুধুমাত্র কয়েকটি ওষুধ দিয়েই দায়সারাভাবে শেষ করছেন তাদের কর্তব্য। শুধু সকাল-বিকেল ও রাতে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়। সারাদিনে একটি বারের জন্যও কোনও চিকিৎসক বা নার্স রোগীদের দেখতে বা খবর নিতে যান না। এমনকী রোগীদের যে খাবার সরবরাহ করা হয় তা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। খাবারগুলো খুবই নিম্নমানের। মুখে দেওয়ার মতো না।

আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা রোগী গোলাম মোস্তফা পারভেজ ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি ওই স্ট্যাটাসে লিখেন- চকরিয়া হাসপাতালে বিদ্যুৎ নাই। আইসোলেশনেও বিদ্যুৎ নাই। বিদ্যুৎ চলে গেলে গরমে গা ভিজে যায়। কিন্তু আইসোলেশন পরিবেশ অনেক সুন্দর, অনেক ভাল। খাবারের কথা বলে লাভ নাই, না খেয়ে মাঝে মাঝে ফেলে দিতে হয়। এক সাথে আটটি ওষুধ খেতে হয় দিনে দুইবার। বাকি সব ঠিকঠাক আছে। একেই বলে আইসোলেশন।

তিনি মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি ২১ তারিখ আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পর পর্যন্ত কোন চিকিৎসক বা নার্স আমাদের ওয়ার্ডে ঢুকেননি। দেখা মিলেনি কোন চিকিৎসক বা নার্সদের। যেদিন এখানে ভর্তি হয়েছি সেদিন কিছু ওষুধ দিয়েছেন। ওইসব ওষুধ নিয়ম করে খেতে বলেছেন। আমি সেভাবে খাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আর খাবার হিসেবে সকালে খিচুড়ির সাথে ডিম, দুপুরে ভাত মাছ আর মাংস, বিকেলে ডিম, দুধ, কলা আর পাউরুটি এবং রাতে ভাত, মাংস বা মাছ আর ডাল দেওয়া হয়। খাবারের তালিকা ঠিক হলেও এসব খাবারগুলো মুখে দেওয়ার মতো না। মাঝে মাঝে এসব খাবার না খেয়ে অনেক সময় ফেলে দিই। রান্নার মান খুবই খারাপ। এমনকি রুমগুলোও পরিস্কার করা হয়না। নিজেদের পরিস্কার করতে হয়।

একই অভিযোগ করেছেন আইসোলেশনে থাকা আরেক করোনা রোগী এমডি মুকুল। তিনি বলেন, এখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে খুবই কষ্ট হয়। প্রায় সময় বিদ্যৎ চলে যায়। এ সময় নেই কোন জেনারেটরের সুবিধা। এ রকম একটি হাসপাতালে জেনারেটর থাকা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি আরও বলেন, দিনে অন্তত একবার হলেও চিকিৎসকরা যদি আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভিজিট করতে আসতো তাহলে আমরা একটু সাহস পেতাম। এতে মনে হয় আমরা ৫০ ভাগ সুস্থ হয়ে উঠতাম। তারা চাইলে আমাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাউন্সিলিং করতে পারেন। আমি মনে করি, করোনা রোগের একমাত্র ওষুধ সাহস। এটা ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করে। মনোবল শক্ত রাখতে চিকিৎসকদের পরামর্শই একমাত্র ওষুধ।

সচেতনমহলের দাবি, এতো বড় হাসপাতাল। কিন্তু রোগীরা যদি পর্যাপ্ত সেবা না পায় তাহলে এই হাসপাতাল বানানোর কি দরকার ছিল। করোনাকালে মানুষের একমাত্র ঠিকানা হাসপাতাল ও চিকিৎসক। কিন্তু চিকিৎসকরা যদি সে সেবাটুকু না দেন বা তারা যদি সহানুভুতি না দেখান তাহলে রোগীরা এমনিতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। তাই উপজেলা প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সকলের সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ রোধে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহবাজের মোবাইলে অনেকবার কল করার পরও কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখা কয়েকটি বিষয় আমার নজরে এসেছে। খাবারের মান উন্নয়নের বিষয় এবং দিনে অন্তত একবার হলেও চিকিৎসক অথবা নার্সরা পুরোপুরি সুরক্ষিত থেকে যাতে আইসোলেশন ওয়ার্ড ভিজিট করেন সে বিষয় নিয়ে হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য একটি জেনারেটরের ব্যবস্থা করা যায় কিনা চেষ্টা করছি। ভবনটির কাজ এখনও চলমান। অনেক কাজ বাকি রয়েছে। চেষ্টা করছি করোনা রোগীদের চিকিৎসাসহ নানা বিষয়কে একটা সুন্দর পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসতে।

এসব বিষয় নিয়ে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালের নানা অসঙ্গতির বিষয় আমার কানে আসে। আমি আইসোলেশনে থাকা রোগীদের খাবারের মান উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে টাকা দিতে চাইলেও সে টাকা নেননি হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা ডা. শাহবাজ। তিনি কি কারণে টাকা নিচ্ছেন না তা আমি অবগত না।

অতি শীঘ্রই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে সাংসদ বলেন, ডা. মোহাম্মদ শাহবাজ রোগীদের বিষয়ে আন্তরিক না। তিনি একজন সম্মুখ যোদ্ধা। এই মুহুর্তে তাঁর দায়িত্ব বেশি। তিনি চাইলে হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা রোগীরা আরও ভালো সেবা পেতে পারতো। তিনি বদলি হয়ে গেছেন এ কথা বলে সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!