আইসিডি/ ১ আগস্ট থেকে বাড়তি চার্জ নেবে বিকডা, একতরফা সিদ্ধান্ত মানবে না অন্যরা

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত ট্যারিফ কমিটির কাজ চলাকালেই আইসিডিসমূহের (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) বর্ধিত ট্যারিফ বা চার্জ আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিশেন (বিকডা)। গত ২৫ জুলাই বিভিন্ন আইসিডিতে সেবাগ্রহীতাদের কাছে চিঠি দিয়ে ১ আগস্ট থেকে খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ও রপ্তানি পণ্য স্টাফিংয়ের ক্ষেত্রে বর্ধিত হারে চার্জ আদায় করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে বিকডা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, যুগ্ম সচিব এবং বেসরকারি আইসিডির ট্যারিফ নির্ধারণের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির আহ্বায়ক বরাবর ওই চিঠি দিয়েছে বিকডা। এদিকে বেসরকারি ডিপোতে বর্ধিত চার্জ কার্যকর হলে আমদাানি-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ‘তারা বিকডার এ ঘোষণা মেনে নেবে না।’

চিঠিতে বিকডা বলছে, ‘অবস্থার আলোকে শুধুমাত্র বর্ধিত ব্যয়ের সাথে সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে আইসিডিসমূহ বিকডা কর্তৃক ঘোষিত বর্ধিত ট্যারিফ আগামী ১ আগস্ট হতে কার্যকর করবে।’

জানা যায়, অফডকের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা বলে গত ১ এপ্রিল থেকে চার্জ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিল বিকডা। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়েছেন শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অসোসিয়েশন এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এসব সংগঠনের নেতারা নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠিও লিখেন।

অপরদিকে চার্জ বৃদ্ধির যুক্তি দেখিয়ে পাল্টা চিঠি দেয় বিকডা নেতারা। চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে ট্যারিফ কমিটির সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত চার্জ বৃদ্ধির বিষয়টি স্থগিত রাখতে বলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। আইসিডির ট্যারিফ নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) অধীনে দুটি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, রপ্তানি পণ্যবাহী ২০ ফুট কন্টেইনারের প্যাকেজ চার্জ ৩ হাজার ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে ৪০ ফুট কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ ৪ হাজার ৮০০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। প্রতিদিনের গ্রাউন্ড রেন্ট চার্জ ২০ ফুট কনটেইনারে ১০০-এর স্থলে ১২৫ টাকা, ৪০ ফুট কনটেইনারে ২০০-এর স্থলে ২৫০ টাকা পুননির্ধারণ করা হয়েছে। ল্যান্ডিং চার্জ প্রতি টন ১৮০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২২৫ টাকা। খালি কনটেইনার ওঠানামা চার্জ (লিফট অন বা লিফট অফ) কনটেইনার প্রতি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৭৫ টাকা।

ডকুমেন্টেশন চার্জ ২৪০ টাকার স্থলে করা হয়েছে ৩০০ টাকা। কনটেইনার পরিবহন চার্জ ২০ ফুটের ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২৫০ এবং ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা পুননির্ধারণ করা হয়েছে। কার্গো রিসিভিং চার্জ প্রতি কার্টন ৩ থেকে বাড়িয়ে চার টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া আমদানি পণ্যবাহী ২০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে প্যাকেজ চার্জ সাড়ে ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭ হাজার ৮০০ টাকা এবং ৪০ ফুট কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ ৭ হাজার ৮০০ থেকে বাড়িযে নয় হাজার টাকা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বিপ্লব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) একটি কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আইসিডিসমূহের (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিল ৪২ শতাংশ। সে সময়ে আইসিডির মাত্র ২০ শতাংশ দর বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছিল। চবক আশ্বাস দিয়েছিল, অবশিষ্ট ২২ শতাংশ এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকরা করা হয়নি। তাই বৃদ্ধির ফলে আয়-ব্যয় সমন্বয়ের জন্য আইসিডিসমূহ বিকডা কর্তৃক ঘোষিত বর্ধিত ট্যারিফ আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করবে।’

এদিকে, ট্যারিফ কমিটির সিদ্ধান্ত আসার আগেই বিকডার একতরফা মাশুল বৃদ্ধির ঘোষণায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অফডক ব্যবহাকারীরা।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সারোয়ার বলেন, ‘ট্যারিফ কমিটি কাজ করছে। কমিটি সিদ্ধান্তের আগে বিকডা চার্জ বাড়াতে পারে না। এতে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। শিপিং এজেন্ট, বাফা, বিজিএমইএ, বিকেএমএই এটা মানবে না। বিকডা একগুঁয়েমি করলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ট্যারিফ কমিটি মিটিং চলছে। এই অবস্থায় হঠাৎ করে চার্জ বৃদ্ধি রপ্তানির উপর প্রভাব পড়বে। কয়েক দিন আগে আমরা ৫০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু বাড়তি ব্যয় বায়াররা দেয়নি। ১ জুলাই থেকে গ্যাসের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় বিকডার চার্জ বৃদ্ধি অনাকাংখিত ও অনভিপ্রেত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, চার্জ বৃদ্ধি বন্ধ করা হোক। ট্যারিফ কমিটি যা সিদ্ধান্ত দেবে, তা আমরা মেনে নেবো। আমদানি না হলে আইসিডি নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কারণ একমাত্র তারাই এই ব্যবসায় করে। সুতরাং চার্জ বৃদ্ধি না করে ব্যবসায় বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত হবে বিকডার।’

উল্লেখ্য, আইসিডিসমূহ দেশের প্রায় শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য এবং ২৫ শতাংশ আমদানি পণ্য হ্যান্ডেল করছে। ১৯টি আইসিডিতে সামগ্রিকভাবে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!