আইন কলেজে ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলা, নেপথ্যে চাঁদার টাকার ভাগ

চট্টগ্রাম আইন কলেজে ছাত্রলীগ নেতাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ঘটনায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন শিমুল সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলার বিষয়ে শিমুল সরাসরি দায়ী করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রহমত উল্লাহ রিফাত ও ছাত্রসংসদের জিএস মাহফুজুর রহমানকে। এই ঘটনায় এখনও মামলা না হলেও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে বিবাদমান দুই গ্রুপের মধ্যে৤ দুই গ্রুপই আবার সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী৤

১৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) শিমুলের মাথায় ছুরিকাঘাত করা হয়। সতীর্থরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। শিমুলের মাথায় ২২টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তার পিতার। আহত হওয়ার পর থেকে ছয়দিন তিনি হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। ষষ্ঠ দিনের মাথায় শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর দুইটার দিকে আহত শিমুলকে দেখতে চমেক হাসপাতালে যান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি শিমুলের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

চট্টগ্রাম আইন কলেজ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বাবদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ফি হল চার হাজার ৮০০ টাকা। ২০০ টাকা বাড়তি আদায় করা হচ্ছিল কলেজ সংসদের নামে। এ কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৫০০। এই ৫০০ শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছিল এক লাখ টাকা। আবার কলেজ পিয়নকে দিয়ে ছাত্রলীগের এক পক্ষ একটি হ্যান্ডনোট বিক্রি করায়। যা বাজারে পাওয়া যায় ৫০০ টাকায়। কিন্তু কলেজ ক্যাম্পাস থেকে কিনতে হয় ৮০০ টাকায়। বাজার আর কলেজ ক্যাম্পাসমূল্যের পার্থক্য প্রায় দেড় লাখ টাকা! মূল ঝামেলা এই আড়াই লাখ টাকা নিয়ে।

আহত শিমুল চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌‘এই আড়াই লাখ টাকা আদায়ের বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমি এই টাকা আদায়ের বিরোধিতা করেছিলাম। একপর্যায়ে ফরম পূরণের সাথে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করে দিয়েছি। এতে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রহমত উল্লাহ রিফাত ও ছাত্রসংসদের জিএস মাহফুজুর রহমান ক্ষিপ্ত হয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়।’

শিমুলের পিতা আবদুল খালেক বলেন, ‘আমার ছেলের মাথায় ২২টি সেলাই দিতে হয়েছে। আজ (২৪ আগস্ট) ছয়দিন সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা এখনও তার ব্যাপারে শঙ্কামুক্ত নন।’

এই ঘটনায় মামলা কেন করেননি কিংবা আদৌ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিমুল রাজনীতিতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সাহেবের অনুসারী। মেয়র সাহেব বলেছেন দুই পক্ষকে নিয়ে বসবেন। তাই আমরা মামলা করিনি। আমি আশাবাদি আমরা সুবিচার পাবো। আর শেষ পর্যন্ত যদি আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হয় সে পথ তো আছেই৤’

এদিকে ছাত্রলীগ সভাপতি রহমত উল্লাহ রিফাত ও ছাত্রসংসদের জিএস মাহফুজুর রহমান হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ‍উল্টো দুষছেন শিমুলকেই। তারা বলছেন শিমুলই ওই অর্থ আদায় করতে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার ওপর হামলা চালায়।

আইন কলেজ ছাত্রলীগের সেই সভাপতি রহমত উল্লাহ রিফাত বলেন, ‘ফরম পূরণ এবং হ্যান্ডনোট বিক্রির টাকা শিমুল এবং ভিপি সোহেল নিতো। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পিটুনি দিয়েছে। মারামারির ঘটনা শুনে আমরা কলেজে গিয়ে দেখি সে আহত। এখানে আমাদের কিছু করার ছিল না৤’

কলেজ ছাত্রসংসদের জিএস মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘১৮ আগস্ট তাদের পক্ষে যারা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছিল তাদের একজনকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আটক করে কোতোয়ালী থানায় সোপর্দ করে। কলেজ সংসদের ভিপি সোহেল আর শিমুল গিয়ে থানা থেকে তাকে ছাড়িয়ে এনেছে। আমরাই যদি অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতাম তাহলে আমাদের কেউ আটক হতো, আমরা থানায় তদবির করতে হতো।’

মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘শিমুলকে যখন মারা হয়েছে তখন তো আমি ক্যাম্পাসেই ছিলাম না। মারামারির ঘটনা শুনে আমি আর সভাপতি ক্যাম্পাসে যাই৤’

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ঘটনায় এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে থানায় সোপর্দের বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আইন কলেজে চাঁদাবাজি হচ্ছে জানিয়ে পুলিশের জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন করা হয়। আমরা ফোর্স পাঠালে এক শিক্ষার্থীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পরবর্তীতে কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং প্রতিপক্ষের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর আটক শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাকে ছাড়িয়ে নিতে কলেজ সংসদের ভিপি সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল থানায় এসেছিলেন।’

আইন কলেজের সাবেক জিএস জাফর আলম রবিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ‘ফেয়ারওয়েল’ অনুষ্ঠানের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছিল। এতে ফেয়ারওয়েলবিরোধী পক্ষ বাধা দেয়। পরবর্তীতে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। শিমুলের ওপর হামলাটা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। রিফাত আর মাহফুজ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সহায়তায় শিমুলকে মারাত্মকভাবে জখম করে।’

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!