হাইকোর্টের আদেশ/ চট্টগ্রামে পায়েল হত্যামামলার বিচারিক কাজে ৬ মাসের লাগাম

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পায়েল হত্যামামলার কার্যক্রম চট্টগ্রাম আদালতে পরিচালনার বিষয়ে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার মামলার শুনানির ধার্য দিনে বাদিপক্ষ বিষয়টি জানতে পারে। কঠোর গোপনীয়তায় হাইকোর্ট থেকে এই স্থগিতাদেশ আনেন মামলার দুই আসামি বাসচালক জামাল ও হেলপার ফয়সল। এদের মধ্যে জামাল ১৬৪ ধারায় খুনের কথা স্বীকার করে ইতিপূর্বে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াও শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রায় ৯০ ভাগ।

এদিকে এই স্থগিতাদেশের ফলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটির বিচার কাজ আর চলবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক আবদুল হালিমের আদালতে এ মামলায় এখন পর্যন্ত নয় জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি আইয়ুব খান বলেন, আসামিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ছয় মাসের জন্য চট্টগ্রামের আদালতে এই মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।

“পাশাপাশি আদেশে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা বিভাগের যে কোনো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তর করতে পারে।”

আসামি জামাল হোসেন এবং ফয়সাল উচ্চ আদালতে এ সংক্রান্ত আবেদনটি করেন।

মামলাটি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় করা হয়। তাই এর কার্যক্রম চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পরিচালনার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয় আসামিদের করা আবেদনে।

NSU-student-Payel-killing-Jamal-Foysal-Jony
চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় হত্যামামলা দায়ের করা হয়

উচ্চ আদালতের বরাত দিয়ে বাদিপক্ষের আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনছারী বলেন, ‘যে স্মারকমূলে মামলাটি চট্টগ্রামের আদালতে পাঠানো হয়েছে তা ‘লিগ্যাল’ হয়নি বলছেন হাইকোর্ট। স্থগিতাদেশের কারণে আপাতত মামলার কার্যক্রম আর এখানকার আদালতে হবে না। এখন পর্যন্ত নয় জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। বাদিপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।’

মামলার বাদি গোলাম সোহরাওয়ার্দী বিপ্লব বলেন, ‘আমাদের হয়রানি করতে এমন স্থগিতাদেশ এনেছে আসামিরা। যাদের আবেদনে এমন স্থগিতাদেশ দেওয়া হলো তাদের মধ্যে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়া আসামিও আছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় এর মোকাবেলা করবো।’

পায়েলের ছোট মামা ফাহাদ চৌধুরী দিপু বলেন, ‘মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ এখন শেষ পর্যায়ে। হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন আমরা আইনজীবীদের সাথে আলোচনা করে সে বিষয়ে উচ্চ আদালতের দারস্থ হব।”

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে মামলাটি মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে ‘জনস্বার্থে’ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন ২০০২ এর ৬ ধারা অনুসারে আদেশটি দেওয়া হয় বলেও উল্লেখ করা হয়।

গত বছরের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্তর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল। ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ। এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে জামাল হোসেন ও ফয়সাল হোসেন দুই ভাই।

পায়েলের মৃত্যুর পর তার মামা গোলাম সরোয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গজারিয়া থানার পুলিশ ওই তিনজনকে আসামি করে ৩ অক্টোবর অভিযোগপত্র জমা দেয়। এরপর মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটির কার্যক্রম চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত হয়।

এ মামলায় বাদি পায়েলের মামা গোলাম সরোয়ার্দী বিপ্লব, পায়েলের দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্ত, পায়েলের মা কোহিনূর বেগম, মামা ফাহাদ চৌধুরী দিপু ও ভাগ্নিপতি আইয়ুব আলী, গজারিয়া থানার এসআই ও পায়েলের সুরতহালকারী সফর আলী, পোস্টমর্টেমের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামান, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক গাজীপুর জেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. সাখাওয়াত হোসেনসহ মোট নয়জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আদালতে গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, গজারিয়া এলাকায় গাড়ি যানজটে পড়ায় প্রস্রাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। বাস চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে এসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সংজ্ঞা হারান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে দায় এড়াতে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন চালক ও সুপারভাইজার।

পায়েলকে অচেতন অবস্থায় সেতু থেকে খালে ফেলে দেওয়ার আগে পরিচয় লুকাতে হানিফ পরিবহনের বাসের চালক ওই তরুণের মুখ থেঁতলে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

সাইদুর রহমান পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা ও বড় ভাই গোলাম মোস্তফা কাতার প্রবাসী। বড় ভাইয়ের সন্তান হওয়ার খবরে জুলাই মাসে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন পায়েল। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথেই ঘটে ওই ঘটনা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র পায়েলের বাসা চট্টগ্রামের হালিশহর আই ব্লকে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!