লক্ষ্মীপুরে অগ্নিদগ্ধ চট্টগ্রামের শাহীনুর মারা গেলেন ঢাকায়

স্ত্রীর স্বীকৃতি আর পাওয়া হল না

বার্ন ইউনিটে নয় ঘন্টা লড়াইয়ের পর লক্ষ্মীপুরে অগ্নিদগ্ধ চট্টগ্রামের মেয়েটি মারা গেল অবশেষে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন শাহীনুর আক্তার নামের ওই তরুণী সোমবার (২২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান। রোববার রাত ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর থেকে এনে বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল শাহীনুরকে। মেয়েটির শরীরের প্রায় ৫৫ ভাগ পুড়ে যায়। শ্বাসনালীতেও প্রদাহ হয়। আমাদের রাউজান প্রতিনিধি জানান, শাহিনুর চট্টগ্রামের রাউজানের নতুনহাট এলাকার সোনাগাজী গ্রামের জাফর আলমের মেয়ে।

স্ত্রীর স্বীকৃতি আদায়ের জন্য মেয়েটি চট্টগ্রাম থেকে ছুটে গিয়েছিল লক্ষ্মীপুরে। স্বীকৃতি তো দূরের, উল্টো প্রতারক স্বামী তাদের বাড়ির পাশের একটি সয়াবিন ক্ষেতে ২২ বছর বয়সী মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। অগ্নিদগ্ধ তরুণীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে পুলিশের দায়িত্বে পাঠানো হয়েছিল ঢাকায়। রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার পাটারিরহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহীনুর আক্তার (২২) নামের ওই তরুণী সংবাদকর্মীদের বলেন, দুই বছর আগে মোবাইল ফোনে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পাটারীরহাট এলাকার মোহর আলীর ছেলে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার প্রেম হয়। এর কয়েক মাস পরে রাউজানে তাদের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর থেকে তার স্বামী এক বছর শ্বশুরালয়ে আসা-যাওয়া করলেও তাকে কখনোই নিজের বাড়ি নেওয়ার আগ্রহ দেখায়নি।

শাহীনুর আক্তার বলেন, বিভিন্ন সময়ে তিনি শ্বশুরবাড়ি আসার তাগিদ দিলেও তাতে সাড়া দেননি স্বামী সালাহ্ উদ্দিন। এ অবস্থায় খোঁজখবর নিয়ে গত শুক্রবার রাতে তিনি একাই ছুটে আসেন স্বামীর বাড়ি। কিন্তু সেখানে এসে দেখতে পান দুই সন্তানসহ অন্য স্ত্রী নিয়ে অনেক আগে থেকেই এখানে সংসার করছেন সালাহ্ উদ্দিন।

তরুণী জানান, ওই বাড়িতে গিয়ে নিজেকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিলে সালাহ্ উদ্দিন তা অস্বীকার করেন। এরপর তিনি স্ত্রীর স্বীকৃতি আদায়ের আশায় গত দুদিন ধরে এলাকায় বিভিন্নজনের কাছে ধর্না দেন। এর মধ্যে স্থানীয় চরফলকন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. হাফিজ উল্যা ও গ্রাম পুলিশ আবু তাহের বিষয়টি সুরাহা করে দেবে বলে দুদিন সময়ক্ষেপণ করেন বলে মেয়েটি অভিযোগ করেন।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে শাহীনুর আক্তার বলেন, ‌’আজ (রোববার) বিকালে প্রতারক স্বামী তাদের বাড়ির পাশের একটি সয়াবিন ক্ষেতে আমাকে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।’

ইউপি সদস্য হাফিজ উল্যা বলেন, ‘স্ত্রীর স্বীকৃতি চাওয়া যুবতীর কাছে বিয়ের কাগজপত্র তলব করা হয়। এ সময় মেয়েটি তার সংগ্রহে কোনো কাগজপত্র নেই বলে জানান। এজন্য আজ দুপুরে তাকে কাগজপত্র নিয়ে ফেরত আসার কথা বলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফিরিয়ে দেওয়ার কিছু সময় পরেই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখান থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দেই। তবে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছে যুবতীটি নিজেই নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন। গায়ে আগুন ছড়িয়ে পড়লে পাশের এক বাড়িতে গামলার পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পড়েন।’

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, মেয়েটির শরীরের প্রায় ৪০/৪২ ভাগ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালীতেও প্রদাহ হয়েছে। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে পুলিশের দায়িত্বে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন জানান, মেয়েটির বাড়ি চট্টগ্রামে। এখানে তার কোনো আত্মীয়স্বজন নাই। তাই পুলিশের একজন এএসআই, একজন নারী ও একজন পুরুষ কনস্টেবল দিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে পুলিশের তদন্ত চলছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী সিনিয়র দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দেয় মুখোশধারী কয়েকজন তরুণ-তরুণী। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!