ভেজাল নিয়ে হাইকোর্ট/ টেস্ট-রিটেস্টে লেনদেন হলেই সরাসরি জেলে পাঠাবো

শর্ত বেঁধে দিয়ে নিরাপদ খাদ্যের কর্তাকে অব্যাহতি

শর্ত বেঁধে দিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হককে। আজ রোববার (১৬ জুন) হাইকোর্টে হাজির হয়ে মাহফুজুল হকের নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় মানহীন ৫২টি খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে সরাতে ও জব্দে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা প্রতিপালন না করার বিষয়ে শুনানি হয়।

সারাদেশে সব পণ্যের মান দৈবচয়ন ভিত্তিতে পরীক্ষা এবং পুনঃপরীক্ষা করতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দিয়ে আদালত এ সময় বলেন, ‘এরকম অভিযোগ আছে যে টেস্ট-রিটেস্টের আগে লেনদেন হয়। এরকম খবর পেলে দুদকে না পাঠিয়ে সরাসরি জেলে পাঠিয়ে দেব।’

নিম্নমানের সেই ৫২টি পণ্য
লাচ্ছা সেমাই: মিষ্টিমেলা, মধুবন, মিঠাই, ওয়েলফুড, বাঘাবাড়ি স্পেশাল, প্রাণ, জেদ্দা, কিরণ ও অমৃত ব্র্যান্ডগুলো।
সরিষার তেল: সিটি অয়েল মিলের তীর, গ্রিন ব্লিসিং ভেজিটেবল অয়েল কোম্পানির জিবি, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা, শবনম ভেজিটেবল অয়েলের পুষ্টি ব্র্যান্ডগুলো।
মসলা: ড্যানিশ, ফ্রেশ, বাঘাবাড়ি স্পেশাল, প্রাণ ও সান এর গুঁড়া হলুদ; এসিআই ফুডের পিওর ব্র্যান্ডের গুঁড়া ধনিয়া।
নুডলস: নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডলি নুডলস। কাশেম ফুড প্রোডাক্টের ‘সান’ ব্র্যান্ডের চিপসও এই তালিকায় রয়েছে।
লবণ: এসিআই, মোল্লবো সল্ট, মধুমতি, দাদা সুপার, তিন তীর, মদিনা, স্টারশিপ, তাজ ও নূর স্পেশাল ব্র্যান্ডগুলো।

৫২টি পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার বা জব্দ চেয়ে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ৯ মে একটি রিট করেন। ১২ মে হাইকোর্ট এক আদেশে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। ২৩ মে অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিন বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় মানহীন ৫২টি খাদ্যপণ্য অবিলম্বে বাজার থেকে সরাতে ও জব্দে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ বাস্তবায়নে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম ‘আইওয়াশ’ (লোকদেখানো) বলে অভিহিত করেন হাইকোর্ট। ওই দিন দেওয়া এক আদেশে নির্দেশনা প্রতিপালন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দিয়ে এ বিষয়ে নিজের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে ১৬ জুন তাঁকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়।

বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি নিম্নমানের পণ্য রয়েছে। গত ২ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিএসটিআই।

রোববার (১৬ জুন) সকালে হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে সকালে আদালতে হাজির হন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। আদালত অবমাননার রুলের পরিপ্রেক্ষিতে মাহফুজুল হক আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। শুনানি নিয়ে আদালত শর্ত ও সময়সাপেক্ষে তাঁকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

হাইকোর্টের দেওয়া শর্তে বলা হয়, শুধু ৫২ পণ্য নয়, সব ভেজাল পণ্যের ক্ষেত্রে সারা দেশে বছরজুড়ে কার্যক্রম চলমান থাকবে। ভবিষ্যতে আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করা যাবে না। এসব ভেজাল পণ্যের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার হালনাগাদ তথ্য সময়ে সময়ে আদালতে জানাতে হবে।

আদালত বলেছেন, একই সঙ্গে ভোক্তাদের খাদ্যপণ্য ও সেবা নিয়ে অভিযোগ শুনতে ও নিষ্পত্তি করতে দুই মাসের মধ্যে একটি হটলাইন সেবা চালু করতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অফিশিয়াল নম্বরটি (০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮) ছুটির দিনেও খোলা রাখতে হবে। যাতে ভোক্তারা অভিযোগ জানাতে পারেন। ছুটির দিনেও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

শুনানি শেষে আদালত ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে নির্দেশনা বাস্তবায়নে অগ্রগতি জানিয়ে আগামী ১৯ আগস্ট প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। সেদিন পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন আদালত।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!