পায়েল হত্যার বিচার স্থগিত হওয়ায় পরিবারের হতাশা

পায়েল হত্যার বিচার স্থগিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে তার পরিবার। সোমবার (২২ জুলাই) পায়েল হত্যার এক বছরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হতাশার কথা জানিয়েছেন তার পরিবার।

সংবাদ সম্মেলনে পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা বলেন, চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল আদালতে চলা মামলাটির অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। নয় জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু আসামি পক্ষের আবেদনে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করায় আমরা হতাশ।

পায়েল হত্যার সময় গোলাম মাওলা প্রবাসে থাকলেও বর্তমানে তিনি দেশে চলে এসেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মামলার বাদি ও পায়েলের বড় মামা গোলাম সোহরাওয়ার্দী বিপ্লব। সংবাদ সন্মেলনে পায়েলের মা কোহিনূর বেগম, মামা কামরুজ্জামান টিটু, ফাহাদ চৌধুরী দীপু উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্তর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন সাইদুর রহমান পায়েল। ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ।

পায়েলের লাশ উদ্ধারের পরদিন ২৪ জুলাই তার মামা গোলাম সরওয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এরপরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে জামাল হোসেন ও ফয়সাল হোসেন দুই ভাই। তারা তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মামলার বাদি গোলাম সরওয়ার্দী বলেন, গত বছরের ২১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে হানিফ পরিবহনের ভলবো বাসে করে ঢাকা রওনা করে পায়েল। পরদিন ২২ জুলাই ভোরে সে রাস্তায় বাস থেকে প্রস্রাব করতে নামে। বাসে ওঠার সময় দরজার সাথে ধাক্কা লেগে আহত হয় পায়েল।

‘দায় এড়াতে’ চালক, সহকারী ও সুপারভাইজার মিলে আহত পায়েলের মুখ থেঁতলে দিয়ে নদীতে ফেলে দেন বলে অভিযোগ করেন। পায়েল হত্যা মামলায় গজারিয়া থানা পুলিশ বাসের সুপারভাইজার জনি, চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আসামি করে গত ৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পায়েল হত্যার পর তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, আসাদুজ্জামান খান, বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের সাংসদ আফছারুল আমিন, এম এ লতিফ ও সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার সাথে সাক্ষাত করেন। এরপর তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করলে তিনি শাস্তি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশ্বাস দেন।

গোলাম সোহরাওয়ার্দী বলেন, মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু হলে তা চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তর করার জন্য মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসককে আবেদন করি। পরিবারের আবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত বছর ২৪ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে মামলাটি চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। ‘জনস্বার্থে’ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন ২০০২ এর ৬ ধারা অনুসারে আদেশটি দেওয়া হয়। যার পর থেকে চট্টগ্রামে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হয়।

গত ২ এপ্রিল থেকে মামলাটি চট্টগ্রামের আদালতে কার্যক্রম শুরুর পর বাদী সরোয়ার্দী বিপ্লব, পায়েলের দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্ত, পায়েলের মা কোহিনূর বেগম, মামা ফাহাদ চৌধুরী দিপু ও ভাগ্নিপতি আইয়ুব আলী, গজারিয়া থানার এসআই ও পায়েলের সুরতহালকারী সফর আলী, পোস্টমর্টেমের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামান, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক গাজীপুর জেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. সাখাওয়াত হোসেনসহ মোট নয়জন সাক্ষ্য দেন।

সোহারাওয়ার্দী বলেন, মামলা চলাকালীন সময়ে গত ৯ জুন চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার আদালতে চলা পায়েল হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ নেন আসামিরা। পাশাপাশি মামলাটি কেন ঢাকায় স্থানান্তরিত করা করা হবে না তা চার সপ্তাহের মধ্যে জানাতে আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে জানাতে আদেশও দেন আদালত।

সোহরাওয়ার্দী আরও বলেন, আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আইনি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে মামলা চালাতে চায়। এই জন্য আইনজীবীরা কাজ করছেন। আমাদের দাবি দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে রেখে দ্রুতসময় তিনজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!