আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা ও লঘু শাস্তির বিধানের কারণে খাদ্যে ভেজালে অপরাধ কমছে না

প্রতিদিন রিপোর্ট :
বিজ্ঞানীদের মতে খাদে ভেজাল মিশ্রন ও বিষাক্ত কেমিকেল মিশ্রন স্লোপয়জন। আর এ স্লোপয়জনের প্রভাবে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে ধাবিত হবে। সে কারনে একজনকে হত্যা করলে তিনি তাৎক্ষনিক ভাবে মৃত্যুবরন করবে, আর খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারনে একজন মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে মরবে। তাই খাদ্যে বিষক্রিয়া মিশ্রণটির শাস্তি মানুষ হত্যার চেয়ে কঠিন হওয়া উচিত।

bagh-nazer

কিন্তু বাংলাদেশে তার বিপরীত, একটি হোটেল বা রোস্তোরাকে জরিমানা করার পর পরবর্তী মাসে ঐ দোকানে গেলে একই ধরনের অপরাধ দেখা যায়। এর মূল কারণ হলো খাদ্যে ভেজালের জন্য লঘু শাস্তি ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা।

 

অন্যদিকে দেশের নাকি দামী কর্পোরেট হাউজ গুলিও মিডিয়া ব্যবসার পাশাপাশি এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য ও খাদ্য পণ্যের বাজারে প্রবেশ করছে। মিডিয়া হাউজের মালিক হবার কারনে খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় তাদের অনিয়মগুলিকে খাট করে দেখা হবে এবং প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদের উপর নজরদারি বাড়াতে সাহস করবে না। সে কারনে খাদ্য ও ভোগ্য পণ্যের বাজারে অপরাধের প্রবণনতা দিন দিন বাড়ছে।

 

যার ফলশ্রুতিতে একশ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য-শস্য মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরী করে এ সমস্ত অপরাধ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে খাদ্য, শাকসবজিসহ হরেক রকমের খাদ্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও মজুতে ভরপুর হলেও খাদ্য শস্য ও খাবারে মানব দেহের ক্ষতিকর সার, কীটনাশক, বিভিন্ন কেমিকেল মিশ্রণের কারনে এ খাবার মানুষের শরীরে পুষ্ঠির চাহিদা নিবারনের চেয়ে জীবনহানির কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

 

খাদ্য ব্যবস্থাপনার সকল স্তরে, বিশেষ করে প্রাথমিক ভাবে উৎপাদন থেকে শুরু করে রান্নাঘর পর্যন্ত যেভাবে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, সংরক্ষন, পরিবহন ও রান্না হবার কথা, যা পুষ্ঠির গুনাগুণ অক্ষন্ন রাখতে সহায়ক হবে তা না হয়ে কোন প্রকার নিয়মের বালাই না মেনে যেনতেন ভাবে উৎপাদন, সংরক্ষন, পরিবহন এবং রান্নার কারনে দেশের বিপুল পরিমান খাদ্যের বাজার এখন মানব দেহের জন্য হুমকি হয়ে দাঁিড়য়েছে। তাই এখন সর্বত্র একই আওয়াজ সকলের জন্য খাদ্যের নিরাপত্তার চেয়ে সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্যের অধিকার চাই। কারন এখন আর মানুষ না খেয়ে মরছে না, মরছে ভেজাল ও অনিরাপদ খাবার গ্রহনের কারনে। আর এই অনিরাপদ খাবার গ্রহনের ফলে কোমলমতি শিশুরা লেখাপড়ায় অমনযোগী, স্থুল স্বাস্থ্য, অরুচিসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

 

ফলে তরুন প্রজন্মের অধিকাংশ শিশুরাই অপুষ্ঠির শিকার হচ্ছে। যার সর্বশেষ পরিনতি হচ্ছে বখাটে হচ্ছে, পিতা-মাতা ও শিক্ষকা/শিক্ষিকাদের অবাধ্য হচ্ছে এবং পুরো জাতি একটি মেধাবিহীন আগামী প্রজন্ম পাচ্ছে। তাই আগামী প্রজন্মকে এ সমস্ত মানব বিধ্বংসী অপরাধী কর্মকান্ড থেকে বাঁচাতে হলে খাদ্যে ভেজাল বিরোধী আন্দোলনে তরুন প্রজন্মকে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।

 

গতকাল বুধবার নগরীর বাকলিয়া আদর্শ বালিকা  উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার বিষয়ে প্রচারনা কর্মসুচির উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

 

বাকলিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ এম এ ছাফা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রচারনা কর্মসুচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। ক্যাব বাকলিয়া থানা সভাপতি এ এম তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালণায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব বন্দর পতেঙ্গা এলাকার প্রধান সমন্বয়কারী হাজী ইকবাল আলী আকবর, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান। আলোচনায় অংশনেন ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি হাজী আবু তাহের, যুগ্ন সম্পাদক মুহাম্মদ জানে আলম, চান্দগাঁও’র ফারহানা জসিম, ক্যাব ডবলংমুরিং এর সাধারন সম্পাদক মোনায়েম বাপ্পী, বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস, হাসিনা বানু প্রমুখ। ক্যাব ডিপিও শম্পা কে নাহার ও জহুরুল ইসলাম সভায় মূল প্রতিপাদ্য বিষয় মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন।

বক্তাগন বলেন দেশে খাদ্য, পণ্য যা-ই বাজারে ভোক্তাদের কাছে আসছে সবকিছুতেই নকল, ভেজালের ছড়াছড়ি। নিরাপদ খাদ্য, খাদ্যে ভেজাল, মাছ মাংশে বিভিন্ন ক্যামিকেল ও ফরমালিন মিশ্রণ, ক্যামিকেল দিয়ে ফলমুল পাকানোসহ মানব বিধ্বংসী কর্মকান্ড চলমান থাকলেও সমাজের একটি বড় অংশ এখানে নিরব। খাদ্যে ভেজালের কারনে অকালে ক্যান্সার, ডায়বেটিক, কিডনী বিকল, স্থুল স্বাস্থ্য, হ্দৃরোগ, মুত্রনালি ও পাকস্থলীর পীড়াসহ নানা রকমের মানব ঘাতক রোগে পুরো জাতি যেন রোগাক্রান্ত। আর জাঙ্ক ফুডের নামে নানা রকম ফাস্ট ফুডের কারনে মেধাহীন আগামী প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে।

 

প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বদলৌতে বর্তমানে দেশের অধিকাংশ মানুষই এখন নকল ও ভেজালের এ সমস্ত খবর সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে। তবে খাদ্যে ভেজালকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীরা যেভাবে সংগঠিত ও শক্তিশালী সিন্ডিকেট সেভাবে ভোক্তারা সংগঠিত নয় বিধায় এ সমস্ত ব্যবসায়ীরা মানুষকে জিম্মি করে জনগনের পকেট কাটছে। আর ছাত্র ও যুব সমাজকে দেশ ও জাতিগঠনমুলক কাজের পাশাপাশি খাদ্য, পণ্যে নকল, ভেজাল, গ্রাহক হয়রানি, প্রতারনা, নিরাপদ খাদ্য, মাছ মাংশে ফরমালিন মিশ্রণ এবং ক্যামিকেল দিয়ে ফলমুল পাকানো বন্ধে সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা গেলে জাতিকে এ মরদ দশা থেকে বাঁচানো সম্ভব। তাই এখন সময় এসেছে জেগে উঠার এবং তৃনমুল পর্যায়সহ সকল স্তরে অনিরাপদ খাদ্য, ফাস্ট ফুডের নামে জাঙ্ক ফুড, নকল, খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠিন সামাজিক প্রতিরোধ ও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা।

 

রিপোর্ট : রাজীব সেন প্রিন্স

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!