আইডি কার্ডে ভুল—মাশুল দিচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ২ কর্মচারী, বেতন ভাতা পাচ্ছে না কেউ

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের এক অফিস সহায়ক ও এক মালী ৬ বছর ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। জাতীয় পরিচয়পত্রে (আইডি কার্ড) একজনের নামে আংশিক ভুল ও অপরজনের জন্ম তারিখ ভুলের কারণে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে নাম ও জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করেও সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং বার বার হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ফলে চাকরি করেও বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত এই ২ কর্মচারী।

এদের মধ্যে মতিলাল দাশ সাবটিম-১৪ শাখায় অফিস সহায়ক ও সুধীর কুমার দাশ বাগান মালী হিসেবে কাজ করছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ‘কাজ নাই মজুরী নাই’ এর ভিত্তিতে কাস্টমস হাউসে কাজ করতেন ৯ জন কর্মী। তাদের মধ্যে বাগান মালীর কাজ করতেন এ দুই কর্মচারী। এদের স্থায়ীকরণ করার জন্য গত ২০১৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (নং ৮৪৯১/২০১৫) দায়ের করা হয়। এ রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল আদালতের জারি করা রায়ে ৫ জনকে অফিস সহায়ক ও ৪ জনকে বাগান মালী পদে নিয়োগ দেন। এ ৯ জনকে বাংলাদেশ সরকারে বেতন স্কেল ২০তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করে দেন আদালত।

এদিকে, সুধীর কুমার দাশ, পিতা- ধনঞ্জন কুমার দাশ জন্ম তারিখ ২/৫/১৯৮৮ ইং তার জন্ম নিবন্ধনে (১৫৯২০৩৮৩৪৩৫৪০) নাম উল্লেখ করা হয়েছে বাবুল কুমার দাশ, পিতা-ধনঞ্জ কুমার দাশ আর জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১/১০/১৯৭২ ইং। এ জটিলতায় বন্ধ রয়েছে তার বেতন ভাতা।

অপরদিকে, মতিলাল দাশ, পিতা- অনন্ত দাশ, মাতা- জ্যোতি বালা দাশ জেলে পাড়া লতিফপুর থানা সীতাকুন্ড জেলা-চট্টগ্রাম। এর জন্ম তারিখ ১/১১/১৯৮৮ ইং। কিন্তু ন্যাশনাল আইডি কার্ডে মতিলাল দাশের স্থলে মতিলাল দাস, পিতা অনন্ত দাশের স্থলে অনন্ত দাস ও মাতা জ্যোতি বালা দাশের স্থলে জ্যোতি বালা দাস উল্লেখ করা হয়েছে। জন্ম তারিখ ১/১১/১৯৮৮ ইং ঠিকই রয়েছে।

মতিলালের নামের ভুল শুধু মাত্র ‘শ’ এর স্থলে ‘স’। নির্বাচন কমিশনের এ ভুলের কারণেই বেতন ভাতা পাচ্ছেন না মতিলাল। কিন্তু এ নাম সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় ধরে নানা হয়রানি শিকার হচ্ছেন এ দুই কর্মচারী। দুইজনই একই সংশোধনীর জন্য তিনবার আবেদন করেছেন নির্বাচন কমিশনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিলাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমি দীর্ঘ তিন বছর যাবত ঢাকা নির্বাচন অফিসে ঘুরেও আমার কাজটি করিয়ে নিতে পারছি না। আমার নামের সামান্য ভুল এটি সংশোধন হওয়া ছাড়া আমি টাকা উত্তোলন করতে পারছি না। এখন বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে আমাকে।
সুধীর কুমার দাশের নামের স্থলে মারাত্মক ভুল হয়েছে ন্যাশনাল কার্ডে। তার নামটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে, লিখা হয়েছে বাবুল কুমার দাশ। এতে জন্ম তারিখও ভুল রয়েছে। তার আসল জন্ম তারিখ ২/৫/১৯৮৮ হলেও আইডি কার্ডে লিখা হয়েছে ১/১০/১৯৭২ ইং সাল। এতে তিনি নাম আর জন্ম তারিখ সংশোধন করতে দেন প্রায় চার বছর আগে। কিন্তু তারও এখনো সংশোধন হয়নি জাতীয় পরিচয়পত্রে।

আক্ষেপের সঙ্গে সুধীর কুমার দাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমস হাউসে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কোন বেতনই পাচ্ছি না। ঘর সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় যোগাযোগ করা হলে আজ ঠিক হচ্ছে কাল ঠিক হচ্ছে এমনটিই বলা হয়।

ভুল সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কি কারণে তা সংশোধন হচ্ছে না তাও জানতে পারছেন না এ দুইজন কর্মচারি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, আমার দুই কর্মচারী বেতন ভাতা পাচ্ছেন না সেটি আমাকে কেউ অবগত করেন নি। তাদের সমস্যা অনেকদিন আগে থেকেই সেটির জন্য তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেছে হয়তো।

চট্টগ্রাম নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে সামান্য ভুল থাকলে সেটি অনলাইনে আবেদন করলে তা সংশোধন হয়ে যাবে। কিন্তু পুরো নাম পরিবর্তন একটু জটিল। সেটি তদন্ত সাপেক্ষে পরিবর্তন হয়। সে ক্ষেত্রে যথাযথ কাগজপত্র উপস্থাপন সাপেক্ষে আবেদন করতে হবে। কাস্টমসের দুই কর্মচারীর বিষয়টি আমার জানা নেই। তাদের পুনরায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!