অ্যাসাইনমেন্টের নামে হাতানো হচ্ছে টাকা, নিয়ম মানছেন না ‘প্রধান শিক্ষক’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে জারিকৃত নির্দেশনা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের শীলঘাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে। টিউশন ফি ছাড়াও এসাইনমেন্ট বাবদ অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে আদায় করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে অভিভাবকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

জানা গেছে, গত ১৮ নভেম্বর মাউশি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে বলা হয়, পূর্বাপর বিষয়গুলো বিবেচনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি গ্রহণ করবে। কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না বা করা হলে তা ফেরত দেবে অথবা তা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে।

কিন্তু সরকারের নির্ধারিত টিউশন ফি ছাড়া অতিরিক্ত বিবিধ ফি বাবদ ১০০ টাকা আদায় করছে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইসহাক।

চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নে ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। এই ইউনিয়নের ছেলে-মেয়েদের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শীলঘাটা উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।

অভিযোগ রয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভর্তি কার্যক্রমেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৮৩ হাজার ৭১০ টাকা আদায় করা হয়। মাউশি টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনো উন্নয়ন বাবদ ফি আদায় না করতে বললেও সরকারের নিয়মনীতি অমান্য করে প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে এসাইনমেন্ট ফি বাবদ আদায় করা হয়েছে।

তাপস বড়ুয়া নামে এই স্কুলের এক প্রান্তন শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরিবার দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। কিন্তু প্রধান শিক্ষকরের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ ভর্তি চলাকালীন সময়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। করোনার মহামারীতে সরকার টিউশন ফির বাইরে অতিরিক্ত কোনো ফি না নেওয়ার আদেশ দিলেও প্রধান শিক্ষক বিবিধ খরচ দেখিয়ে প্রতি শিক্ষার্থী থেকে ১০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে।’

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা মহামারিতে সবাই আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে। আর্থিক সংকটের কথা চিন্তা করে সরকার নির্ধারিত টিউশন ফি নেওয়ার নির্দেশ দেয়। সরকারের নিয়ম নীতি অমান্য করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসাইনমেন্ট বা উন্নয়ন ফি নিয়ে স্কুলের কর্তৃপক্ষ গরীব শিক্ষার্থীদের হক মারছে। যা সব অভিভাবকদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না।’

তারা আরও বলেন, ‘ধোপাছড়ির শীলঘাটা উচ্চবিদ্যালয় একটি সনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৯০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়ে। সরকার নির্ধারিত টিউশন ফি নিতে বললেও এমন করুণ সময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০০ টাকা এসাইনমেন্ট ফি বাবদ নিচ্ছেন। যা বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে। আমরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো এই বিষয়টা যেনো দেখে। আর এসাইনমেন্ট বাবদ যে ১০০ টাকা নিয়েছে তা যেনো ফেরত দেয়। প্রধান শিক্ষক প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়াতে নিজের ইচ্ছেমত অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করছে।’

এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের স্কুলের ৭০% শিক্ষার্থী দরিদ্র সীমানার নিচে বসবাস করে। তার মধ্যে অনেকে ২ বেলা ঠিকমত না খেয়ে পড়াশুনা করছে। তাদের ১০০ টাকা দিয়ে নিজের পেট পূজা করছেন। জানিনা স্কুল ফান্ডের অস্তিত্ব রেখেছেন কিনা।’

আরেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জানুয়ারিতে ভর্তি কার্যক্রমে মহাশয় অতিরিক্ত ৮৩ হাজার ৭১০ টাকা আদায় করেন। ঠিক এভাবেই তিনি সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিবিধ খাত দেখিয়ে প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে কত টাকা নিয়েছেন আপনারা বলেন?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধোপাছড়ির শীলঘাটা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসহাক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা টিউশন ফি ছাড়া অন্য কিছু বাবদ ফি আদায় করিনি। প্রতিষ্ঠান সব সময় নীতিমালা অনুসরণে বদ্ধপরিকর। নীতিমালার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নীতিমালার বাইরে গেলে তাদেরও বিপদ প্রতিষ্ঠানেরও বিপদ।’

তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখবেন আপনি সাংবাদিক হোন বা যাই হোন আমার বিষয় না। আপনার যা ইচ্ছে লিখেন। আমি এসাইনমেন্ট বাবদ কোন ফি নিইনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দনাইশ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রতন কুমার সাহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি ছাড়া এসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, ম্যাগাজিন ও অন্যান্য উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করতে পারবে না। করলেও ফেরত দিয়ে দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরকম অনিয়ম কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে পারবে না। আমি এ বিষয়টি দেখছি। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ পলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আসম জামশেদ খোন্দকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের থেকে টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনো ফি আদায় করতে পারবে না। অভিযোগের ভিত্তিতে চন্দনাইশ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ব্যবস্থা নিবে। তারা পদক্ষেপ নিতে না পারলে তখন আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’

এ বিষয়ে কথা বললে চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী (এমপি) চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই। আমি এ বিষয়ে খবর নিয়ে দেখছি।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!