অস্থির নিত্য পণ্যের বাজার, রমজানের আগেই দাম নাগালের বাইরে

পণ্য গুদামজাত করার অভিযোগ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে

রমজানের আগেই অস্থির নিত্য পণ্যের বাজার। রমজানের চাহিদাকে পুঁজি করে চট্টগ্রামের খাতুগঞ্জে গরম হওয়া বইছে ভোগ্যপণ্যের উপর। এরমধ্যে আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট গুদাম ভর্তি করে রেখেছে বিভিন্ন নিত্যপণ্য। যা আরো চড়া দামে বিক্রি করবে রমজানের আগমুহূর্তে।

দেশের বাজারে ভোজ্যতেল, চাল, চিনি, পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে রজমানের আগেই। আগামি ১৪ এপ্রিল থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়া কথা রয়েছে। এরমধ্যে খাতুনগঞ্জের আড়তে সব ধরণের পণ্যের উর্ধ্বগতি।

দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম ৪ টাকা কেজিতে বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ মূল্যের নতুন এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে ১৩৫ টাকা লিটার বিক্রি করা হলেও নতুন দাম ১৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সোমবার থেকেই। (লুজ) সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগে ১১৫ টাকা ছিল।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি লিটার লুজ সয়াবিন মিল গেটে ১১৩ টাকা, ডিলারের কাছে ১১৫ টাকা ও বাজারে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায় বিক্রি হবে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম মিল গেটে ১২৭ টাকা, ডিলার কিনবেন ১৩১ টাকায় ও বিক্রি হবে সর্বোচ্চ ১৩৯ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলজাত তেলের দাম মিল গেটে ৬২০ টাকা, ডিললারের জন্য ৬৪০ টাকা, সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য ৬৬০ টাকা। এবং প্রতি লিটারের পামতেল লুজ (সুপার) তেলের দাম মিল গেটে ১০৪ টাকা, ডিলার ১০৬ টাকা ও সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য ১০৯ টাকা।

জানা গেছে, রমজানকে সামনে রেখে ভোজ্যতেলের যৌক্তিক মূল্যে যেন বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত হয় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এজন্য অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামওয়েল আমদানিতে আরোপিত ভ্যাট ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় আরও বেশি যৌক্তিকহারে নির্ধারণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন। যার সম্পূর্ণটাই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করে পূরণ করতে হয়।

গত জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন সয়াবিন তেলের দাম ১২৭৫ ডলার ও পামওয়েলের দাম ১০৩৭ ডলার।

এদিকে, চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও রমজানের আগেই অস্থির হয়ে উঠেছে পণ্যের দাম। বেড়েই চলেছে চাল, ডাল, তেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, চিড়ার দাম। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৯ হাজার ২১৮ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২ হাজার ৫২৬ টন বেশি। ফেব্রুয়ারিতে আসা ছোলার মধ্যে শুধু অস্ট্রেলিয়া থেকেই এসেছে প্রায় ১৮ হাজার ৯৭৯ টন।

অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ছোলা খাতুনগঞ্জে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৪ থেকে ৬৬ টাকায়। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬১ টাকায়। মাঝারি মানের যেসব ছোলা কিছুদিন আগেও প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬১ টাকায় বিক্রি হয়েছে, একই মানের ছোলা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৫ টাকায়। একইভাবে চিড়ার দামও বেড়েছে কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা। কিছুদিন আগেও খাতুনগঞ্জে যেসব চিড়া প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়।

মসুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। বর্তমানে ভালো মানের প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৮ থেকে ১০২ টাকা, মাঝারি মানের ৬৮ থেকে ৭২ টাকা এবং মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা। সাদা মটর ডালের দামও প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। খাতুনগঞ্জে আগে যেসব আমদানি করা শুকনো মরিচ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯২ টাকা।

চালের দাম গত একমাস আগে থেকেই অস্থির। আগে থেকেই বস্তায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু সেই দাম ছাড়িয়ে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আরও বেড়েছে প্রতিবস্তায় (৫০ কেজি) ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত। চালের দাম সর্বোচ্চ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চাল। আতপ চাল বিক্রি ২ হাজার ৯০০ টাকায়। নূরজাহান সিদ্ধ (নতুন)২ হাজার ৭০০ টাকা দরে। পুরো সিদ্ধ ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল ৩ হাজার ১০০ টাকায়। মিনিকেট আতপ ৩০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৮ থেকে ১৩০ টাকা। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে মানভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা। খাতুনগঞ্জে ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খুচরা বাজারে একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।

কিছুদিন আগেও প্রতিটি নারকেল ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। গত সাত মাসে ৬০ হাজার ৩৩১ টন চিনি আমদানি হলেও বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘কাঁচাপণ্যের সরবরাহ কম এ কারণে আমদানি করা পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। সেই সাথে চাল ডাল চিনির দাম তো আগে থেকেই বৃদ্ধি আছে।’

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডান্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রমজানে পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং সেল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সতর্ক থাকতে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হয়েছে। সরকারের মনিটরিং জোরদার করতে হবে। তবে, রমজানের চাহিদা পুরণের জন্য প্রস্তুত আমাদের খাতুনগঞ্জ।’

ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে চাল, ডাল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। কারসাজি ও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেই দাম বাড়ানো হচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীদের গুদামে হানা দিলেই আসল চিত্র বেরিয়ে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘হালালভাবে ব্যবসা করার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যবসায়ীদের। এটা ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়। কিন্তু হালাল রোজগার থেকেই সরে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!