অস্ত্র হাতে ‘নারী ছিনতাইকারীর’ আক্রমণ, রক্তাক্ত হচ্ছে পথচারীরা

২০ বছরের তরুণী রূপালী রূপা যার আরেক নাম নিপা। ছিন্নমূল পরিবেশে বেড়ে ওড়া রূপার শৈশবের বন্ধু রাকীবুল হাসান রাকিব, রাশেদ, জোবায়ের এখনো তার বন্ধু। আর বন্ধুত্বের এই সম্পর্ক তারা কাজে লাগাচ্ছে ছিনতাইয়ের কাজে। ছিনতাই করেই তারা থামছে না, পথচারীর সব কেড়ে নিয়ে তাকে করছে ধারালো ছুরির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত।

অনেক ক্ষতবিক্ষত পথচারীর একজন অরবিন্দু দত্ত। ১৬ নভেম্বর রাত ১১টায় নগরীর গনি বেকারির মোড়ে গুডস হিলের সামনে রাকীব-রূপাদের হাতে মারাত্মক আহত হন। ধারালো ছুরির আঘাতে তার একটি আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বুকে ও পেটে তিনটি আঘাত পান। পথচারীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল (চমেক) হাসপাতালে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করায়। তিনি মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মুরাদপুর অফিসের মার্কেটিং অফিসার।

ছিনতাইয়ের ঘটনায় উৎপল দত্ত নামের এক ব্যক্তি কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) রাতে পুলিশ রাকীব, রূপা, রুবেল, ফারজানা, রাজু, আলামিন ও আব্দুল নাঈমকে আটক করে। তবে রাশেদ ও জোবায়েরসহ এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের আটকে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন।

ওসি মহসিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ছিনতাইকারী এই দলের সদস্যরা পথচারীর মোবাইল, টাকা পয়সা বা মালামাল কেড়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয় না। তারা পথচারীদের ধারালো ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে। ১৬ নভেম্বর রাতের ছিনতাইয়ের ঘটনা জানার সাথে সাথেই টিম কোতোয়ালী ছিনতাইকারীদের আটকে মাঠে নেমে পড়ে। নির্ঘুম রাতের কষ্টের ফলে তারা ১৭ নভেম্বর রাতেই এই ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারীদের আটকে সক্ষম হয়।

ছিনতাইয়ের কৌশল সম্পর্কে ওসি মহসিন বলেন, রূপা প্রেমিকা আর রাকীব প্রেমিক পরিচয়ে ঘুরোঘুরির জন্য ঘন্টায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বিনিময়ে সিএনজি চালিত টেক্সি ভাড়া করে। ঘুরতে ঘুরতে তারা তাদের ভাষায় শিকার পেয়েগেলে শিকারের অর্থাৎ পথচারীর সামনে গিয়ে সিএনসি থামায়। সিএনজি থেকে নেমে রূপা পথচারীর সাথে কথা বলতে চায় বা তাকে ধরে রেখে ব্যস্ত রাখে। এই সুযোগে রাকিব ছুরির ভয় দেখিয়ে এবং ছুরিকাঘাত করে পথচারীর মোবাইল বা টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়।

আটক রাকীব ও রূপার ছিনতাইয়ের ক্ষেত্র ছিল চকবাজার থানার প্যারেড কর্ণার, কলেজ রোড, চট্টেশ্বরী রোডের সার্সন রোড, কোতোয়ালী ও চকবাজার থানার সীমানা রেখা জামালখান, গনিবেকারী এলাকায়।

ওসি মহসিন আরো জানান, রূপালী রূপা প্রকাশ নিপা দেওয়ান বাজার এলাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তিনি সন্ধ্যার আগেই কাজ থেকে ফ্রি হয়ে সন্ধ্যার সাথে সাথেই রাকীবসহ তার ছিনতাইকারী দলের সাথে যুক্ত হতেন। ছিনতাই থেকে অর্জিত অর্থ তারা মাদক সেবন ও আনন্দ ফুর্তিতে ব্যয় করতেন। ছিন্নমূল হওয়ায় তাদের স্থায়ী কোন আবাস নেই।

ছিনতাইকারী রুবেলের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় পাঁচটি, ফারজানার বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং রাজুর বিরুদ্ধে একটি রয়েছে বলে জানা গেছে। সবাইকে অস্ত্র আইনে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশন দেন বলেও জানান ওসি মহসিন।

এফএম/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!