অস্ত্র উঁচিয়ে ভাইরাল নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ

হাটহাজারীর ফতেপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল মনির রামদা হাতে প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে উদ্যত হওয়ার ছবি প্রকাশ হয় ফেসবুকে। এ ঘটনায় হাটহাজারী উপজেলা জুড়ে সৃষ্টি হয় তোলপাড়।

কিন্তু ঘটনার ৯ দিন পার হলেও তার বিরুদ্ধে সাংঠনিক কোন ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ।
শুধু তাই নয়, অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য হলেও এ ঘটনায় হাটহাজারী থানা এখনো কোন মামলা দায়ের করেনি।

ছাত্রলীগের দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হলে অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি হালে দেখা গেলেও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদধারী নেতার হাতে রামদা দেখা যাওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে প্রথম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রলীগের পদধারী কোন নেতার হাতে রামদা দেখা গেলে তাকে বহিস্কার করা হয় কেন্দ্রীয় সংগঠন থেকে। এমনকি মামলাও হয়ে থাকে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতার হাতে প্রকাশ্যে রামদা দেখা গেলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াকে আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক দূর্বলতা হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া ফৌজদারী অপরাধ হলেও এ ঘটনায় হাটহাজারী থানা নেয়নি মামলা। আটকও করেনি তাকে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ঘাটকুল গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়।

এ সময় হাটহাজারী ফতেহপুর ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল মনি প্রতিপক্ষকে রামদা হাতে নিয়ে নারী ও পুরুষদের দিতে আঘাত করতে উদ্যত হন। এ ঘটনার ছবি প্রকাশ হয় ফেসবুকে। গত ১৭ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ফোরক আহমদ, সিদ্দিক আহমদ, আব্দুস সাত্তার, শামসুল আলম, লোকমান মিয়া ও আব্দুল খালেকদের ৬ ভাইয়ের প্রায় ১২ একর সম্পত্তি রয়েছে মদনহাট এলাকায়। এসব সম্পত্তি তাদের সন্তানদের মধ্যে এখনো ভাগ হয়নি। এদের ১ জন ছাড়া বাকিরা সবাই মারা গেছেন। বর্তমানে সিদ্দিক আহমদ, লোকমান মিয়া ও ফোরক আহমেদের এক সন্তান সম্পত্তিগুলো ভাগের দাবি তুলে।

অভিযোগ উঠেছে, আব্দুল খালেকের সন্তান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল মনি অন্যান্যদের সম্পত্তি দখলে রাখার চেষ্টা করছে বলে সম্পত্তি ভাগ করতে আগ্রহী নয়। ফলে এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় সিদ্দিক আহমেদের পরিবারের সঙ্গে।

১৭ এপ্রিল এ বিষয়টি নিয়ে উভয় পরিবারের সদস্যরা মুখোমুখি হয়। তখন রামদা হাতে তেড়ে আসে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল মনি। যার ছবি ফেসবুকে প্রকাশ হয়।

এ ঘটনায় আয়েশা আক্তার নামে একজন হাটহাজারী থানায় অভিযোগ দায়ের করে। আয়েশা আক্তার সিদ্দিক আহমদের সন্তান হাসান লিটনের স্ত্রী।

অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এস আই হেলালকে। কিন্তু ‘রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ’ থাকার অজুহাতে ঘটনার ৯ দিন পরও তাকে গ্রেফতার করা থেকে বিরত থেকেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে অস্ত্রধারী রাসেল মনির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আয়েশা আক্তার বলেন, ‘প্রকাশ্যে রাসেল মনি আমাদের উপর হামলা চালাতে রামদা নিয়ে আসেন। আমরা এ কারণে আতংকে আছি। কারণ থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। যেকোনো সময় রাসেল আমাদের উপর আবারো হামলা চালাতে পারে।’

এ বিষয়ে রাসেল মনির নাম্বারে সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দলের পদে থেকে দলের পদ-পদবী ব্যবহার করে কোন অপরাধ করার সুযোগ নেই। আমরা দলের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব।’

রামদা হাতে উদ্যত রাসেল মনিকে গ্রেফতার কেন করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে (হাটহাজারী থানার এস আই হেলাল বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর ওসি স্যারসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জায়গা-জমিসহ বেশ কিছু জটিলতা আছে। এজন্য তদন্তকাজে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। আমরা আদালতে আবেদন করেছি। আদালতের অনুমতির পর আমরা অগ্রসর হবো।’

প্রকাশ্যে রামদা প্রদর্শন করে হত্যার হুমকির ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে রামদা নিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেটিও উদ্ধারের চেষ্টা আমরা করছি। রামদা উদ্ধার হলে যদি সেটা অস্ত্রের কাতারে পড়ে অবশ্যই আমরা সেটাবে অস্ত্র আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেব।’

এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!