দেড় বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর অস্তিত্বহীন দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। ‘বেলস ফেল্ট’ (ফোম) এবং ‘ব্রান্ড নিউ মেশিনারি ফর প্রিন্টিং’ (প্রিন্টিং মেশিনারি) আমদানির ঘোষণা দিয়ে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট আনার দায়ে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাগুলো দেড় বছর আগের হলেও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়েরের সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা না থাকায় এতদিন আটকে ছিলো মামলার প্রক্রিয়া। সর্বশেষ এনবিআরের অনুমতি পেয়ে বন্দর থানায় ২টি পৃথক মামলা দায়ের করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ২৯ আগস্ট মামলা দায়ের হলেও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে জানানো হয় রোববার (১ সেপ্টেম্বর)।
মামলায় অস্তিত্বহীন দুটি প্রতিষ্ঠানের ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় বাদি হয়েছে এন্টি মানিলন্ডারিং ইউনিটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রসাদ কুমার মন্ডল এবং মঞ্জুরুল ইসলাম।
যেসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মামলায় আসামি করা হয়েছে তারা হলেন ঢাকার মতিঝিলের রহমান ম্যানশনের ‘মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ’ এবং ঢাকার পুরানা পল্টনের ড. নবাব আলী টাওয়ারের মেসার্স ‘গ্রামবাংলা ফুড করপোরেশন লিমিটেড’।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের ডিসি ( ডেপুটি কমিশনার) নুর উদ্দিন মিলন বলেন, ‘যে দুটি প্রতিষ্ঠান এই চালানগুলোর আমদানি করে তাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ব্যাংকে এলসির সূত্র ধরে ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়। যে সময় পণ্য চালানগুলো আটক করা হয়েছিলো তখন মানি লন্ডারিং আইনে মামলার বিষয়ে কোন সুষ্পষ্ট নীতিমালা ছিলো না। বিষয়টি এনবিআরের নজরে আনলে চলতি বছরের মার্চে এ বিষয়ে বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে মানিলল্ডারিং আইনে মামলাগুলো দায়ের করা হলো।’
বন্দর থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলা সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মতিঝিলের মেমার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৪ সেট প্রিন্টিংয়ের মেশিনারি এবং ১ প্যাকেজ ব্যাগ আমদানির ঘোষণা দিয়ে ৩৭ কার্টন ইজি স্পেশাল গোল্ড, ৬৭ কার্টন ইজি লাইট, ২২৩ কার্টন ব্ল্যাক, ১০৩ কার্টন বেনসন, ৫৪ কার্টন ডানহিল এবং ১৫০ কার্টন থ্রি জিরো থ্রি ব্যান্ডের সিগারেট নিয়ে আসে। গত বছরের ১৩ মার্চ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ধানমন্ডি শাখায় এলসি খুলে। এই চালানের মধ্য দিয়ে মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়াও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার ২০৫ টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করেছে। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে আাব্দুল বারিক, কবির হোসেন নামের দুই ব্যক্তিকে।
বন্দর থানায় দায়ের হওয়া অন্য মামলার এজাহারে জানা যায়, ঢাকা রামপুরার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স গ্রাম বাংলা ফুড কর্পোরেশন বেলস ফেল্ট পণ্য আমদানির ঘোষণা দিয়ে নিয়ে আসে মন্ড ব্র্যান্ডের ১৫০ কার্টন এবং ৩০৩ ব্র্যান্ডের ৫০০ কার্টন সিগারেট। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল শতভাগ কায়িক পরীক্ষার পর মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এই চালানের মাধ্যমে আমদানিকারক ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ৭ শ ১০ টাকা বিদেশে পাচার করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক এশিয়া উত্তরা শাখা থেকে এলসি খোলে। এই মামলায় আসামি করা হয় গ্রাম বাংলা ফুড কর্পোরেশনের মালিক দেওয়ান বুলবুল ইসলাম, সহযোগী ব্যবসায়ী নুর আল মামুন রুবেল এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এ. জান চৌধুরী অ্যান্ড সন্সের মালিক আফজাল জান চৌধুরী।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, সংঘবদ্ধ এই জালিয়াত চক্রের সাথে এলসি সুবিধা দেওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এলসি সুবিধা দিয়ে অর্থ পাচারের ঘটনায় ব্যংকগুলোরও দায় রয়েছে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ থেকে মানিলন্ডারিং আইনে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলো রেকর্ডও হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
এসসি/এসএস