‘অসীম’ ক্ষমতায় অসীম চেয়ারম্যান ভেঙে দিলেন মন্দির, ভয়ে চুপ ক্ষতিগ্রস্তরা

জায়গা আত্মসাতের লোভে কৌশলে ‘মন্দির ও গীতা শিক্ষা কেন্দ্র’ ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৭ নং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেবের বিরুদ্ধে।

৩০ বছরের পুরনো শ্রী লোকনাথ মন্দির ও শ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ জীব গীতা বিদ্যা নিকেতন নামে একটি গীতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলার প্রতিবাদে আনোয়ারা জয়কালী বাজার কলেজ রোডে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

মানববন্ধন থেকে বক্তারা অভিযোগ করেন, অসীম চেয়ারম্যানের দাপটের কাছে এলাকাবাসী অসহায়। মানুষের জায়গা দখল, নির্যাতনের শিকার সাধারণ মানুষ। কিছু লোকবল নিয়ে একটি শক্তিশালী দল গঠন করেছেন অসীম— যারা মূলত অসহায়, গরিব হিন্দুদের জায়গা দখলের কাজ করে থাকে। আর অসীমের ক্ষমতা ও তার দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না আনোয়ারার ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দারা।

মন্দির ভাঙার বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদকের কথা হয় ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির কমিটির সভাপতি রুবেল দাসের সাথে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান অসীম সনাতন ধর্মাবলম্বী হয়ে কেন মন্দির ভাঙার মত একটি বিতর্কিত কাজ করতে যাবেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে রুবেল দাস জানান, ‘অসীম চেয়ারম্যানের কাছে টাকার বিনিময়ে সব হয়, এই মন্দিরটি আমার ঠাকুরমা ৩০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন এখানে একটি গীতা স্কুল আছে যেখানে প্রতি শুক্রবার বিনামূল্যে ১০০ জন শিশুকে গীতার জ্ঞান দেওয়া হয়।’

মন্দির কমিটির সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, ‘মন্দিরের সামান্য একটি জায়গা নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী মনা দাশ, ধনা দাশ, ননা দাশ, সোনা দাশসহ ওদের সাত ভাইদের সাথে একটি দ্বন্দ্ব আছে, যেটি বর্তমানে চট্টগ্রাম আদালতে বিচারাধীন। যেহেতু জায়গাটির ওপর মন্দির আছে তাই আমার প্রতিবেশি সাতভাই চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়ে রাস্তা করার নাম দিয়ে মন্দির ভেঙে সম্পূর্ণ জায়গাটি আত্মসাৎ করতে চাইছেন। তিনি মন্দিরের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন, তিনি আমাদের মন্দিরের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ ৮০ হাজার টাকা মেরে দেন।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওটা কোনো মন্দিরই না, ওটা কখনোই মন্দির ছিল না, ওটা একটা ঝুপড়ি।’

ভাঙা মন্দিরের ভেতর লোকনাথের মূর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওরা মূর্তিটা ভাঙার পর এনে বসিয়ে দিয়েছে।’

মন্দিরের জায়গার মামলার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের সাথে অশালীন আচরণ করে ফোন কেটে দেন।

এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জায়গা জমি সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলেও জানা যায়। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পিয়াস ভট্টাচার্য্য নামে এক ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগও করেন অসীমের নামে। অভিযোগপত্রে দেবোত্তর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য অসিম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনাননুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের আবেদন করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৭নং ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা জানান, যে রাস্তাটির কথা বলে মন্দিরটি ভাঙা হলো ঠিক তার সোজা কলেজ রোডে একটি মসজিদ আছে। চেয়ারম্যান যদি মসজিদ না ভেঙে তার পাশ দিয়ে রাস্তা করতে পারেন, তাহলে মন্দিরের বেলায় কেন মন্দির ভাঙতে হচ্ছে? তিনি চাইলে তো মন্দিরের পাশ দিয়েই রাস্তাটা নিতে পারতেন। এখান থেকেই তো বোঝা যায় মন্দির ভাঙার পিছনে শুধু রাস্তা করা না, অন্য উদ্দেশ্য আছে তার।

এ বিষয়ে আনোয়ারা রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী বিবেকানন্দ যুব সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাশ জানান, ‘যেহেতু মন্দির পড়েছে রাস্তার পাশে চেয়ারম্যান চাইলে মন্দিরের পাশ দিয়ে রাস্তাটি নিয়ে যেতে পারতেন।’ আর চেয়ারম্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান যেদিক টাকা পায় সেদিকে যায়, এলাকায় জায়গার জন্য দালালি করেন।’

রাজিব দাশ আরও বলেন, ‘শ্যামল দাশ, বিশ্বজিৎ দাশ মিঠু, তাপস বল, জনি শীল মেম্বারকে নিয়ে একটি দল তৈরি করেছেন অসীম— যাদের কাজ হচ্ছে অসহায় মানুষদের জমি আত্মসাৎ করা। আর এ দলের অর্থ জোগান দেন রঞ্জন সেন এবং প্রশাসনিক সহায়তা দেন অসীম চেয়ারম্যান। এলাকার বহু গরিব মানুষের জায়গা দখল করেছে এরা। এদের প্রভাব এতই বেশি যে কেউ চেয়ারম্যানদের ওপর কথা বলার সাহস পান না।’

চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষতিগ্রস্থ একজনের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি ‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলে আবার বিপদে পড়তে’ চান না বলে ফোন কেটে দেন।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!