অসমাপ্ত পরীক্ষার রুটিন না দিলে আমরণ অনশনে যাবে চবি শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) করোনা ভাইরাসের কারণে আটকে থাকা বিভিন্ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার রুটিন আগামী বৃহস্পতিবারের (৩ ডিসেম্বর) মধ্যে ঘোষণা না করলে রোববার (৬ ডিসেম্বর) থেকে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্ত্বরে একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বিভিন্ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ, চবি’ নামের একটি সংগঠন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৮ মার্চ থেকে করোনার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বিভিন্ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষসহ অন্যান্য বর্ষের চলমান ও তারিখ নির্ধারিত পরীক্ষাসমূহ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরীক্ষাসমূহ নেওয়ার ব্যাপারে কোনরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করায় গত সেপ্টেম্বর মাসে আমরা স্ব স্ব বিভাগে স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহ নেওয়ার ব্যাপারে বিভাগীয় সভাপতি এবং পরীক্ষা কমিটির সভাপতি বরাবর যোগাযোগ করি। বিভাগসমূহ থেকে জানানো হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক অনুমিত ব্যতীত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ, চবি’ এর পক্ষ থেকে গত ১৬ অক্টোবর মানববন্ধন করি এবং আমাদের দাবি সংবলিত স্মারকলিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর পেশ করি। উক্ত স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহ নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়। কিন্তু সময়ের কালক্ষেপণে আমরা কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি।

এরপর গত ১৮ ও ১৯ অক্টোবর যথাক্রমে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর নেতৃত্বে আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে পৃথক দুটি মানববন্ধন হয় এবং স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এর বিপরীতেও অতিসত্ত্বর পরীক্ষা নেওয়ার আশ্বাস পেলেও আমরা কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। ১৯ অক্টোবর একই দাবিতে বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে আরও একটি মানববন্ধন হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

বারবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের পরে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহ নেওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর কোন সিদ্ধান্ত না আসায় ১০ নভেম্বর সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ, চবির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। প্রধান ফটকে তালা দিতে গেলে বাধা প্রদান করা হয় এবং পরীক্ষা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে ১৫ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ের কথা বলা হয়।

১৫ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি এবং পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা আমরা সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানতে পারি। কিন্তু ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও উক্ত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন না হওয়ায় পুনরায় স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

সর্বশেষ বিগত ২৯ নভেম্বর মিটিং শেষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত জানানো হয় প্রথমে বিভিন্ন বিভাগে স্থগিত মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষাসমূহ নেওয়া হবে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে পর্যায়ক্রমে স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গতকাল ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ ৪৩তম বিসিএস (সাধারণ) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং আবেদনের সর্বশেষ তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০২১ উল্লেখ করা হয়। উল্লেখিত তারিখের মধ্যে আমাদের পরীক্ষা সমাপ্ত না হলে আমরা আবেদনের যোগ্যতা হারাব। যেটি বিগত ৪১তম বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে আমরা হারিয়েছি।

তাই আগামী ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থগিতকৃত পরীক্ষাসমূহ নেওয়ার ব্যাপারে যদি তারিখ ঘোষণা পূর্বক সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা না আসে, তাহলে আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে আমরা আমারণ অনশনে যাবো।

এমআইটি/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!