অল্প কাজ করে চসিকের ১৬ কোটি টাকার বিল তুলতে অভিনব কৌশল ঠিকাদারের

রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রেখে দেখানো হচ্ছে কাজের বাহাদুরি

দেড় মাসে ১৬ কোটি টাকার সড়কে নির্মাণ কাজ হয়েছে মাত্র ১৫ ভাগ। অথচ এখনই বিল তুলতে শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পতেঙ্গা থানার বিজয়নগর এলাকায় সড়কটির নির্মাণ কাজ চলছে। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। আর সৌভাগ্যবান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম এমআর এন্টারপ্রাইজ।

প্রায় ১৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারলে কাজের বিল পরিশোধ করার কথা রয়েছে চসিকের। কিন্তু মাত্র ১৫ শতাংশ কাজ শেষ করে সিটি কর্পোরেশন থেকে বিল তুলতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি এঁকেছে অভিনব ছক। ৪০ শতাংশ নির্মাণকাজ ‘শেষের পথে’— এটা দেখাতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাস্তায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাস্তবে গত দেড় মাসে শেষ করতে পারেনি বিজয়নগর এলাকার এ-ব্লকের একটি রোডের কাজও। এদিকে বিল তুলতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।

৪০ শতাংশ নির্মাণকাজ ‘শেষের পথে’— এটা দেখাতে বিচ্ছিন্নভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে।
৪০ শতাংশ নির্মাণকাজ ‘শেষের পথে’— এটা দেখাতে বিচ্ছিন্নভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, জাইকার প্রকল্পের কাজ তদারকির জন্য জাইকার প্রকল্প কর্মকর্তা ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও দেড় মাসে তাদের দেখা মিলেছে হাতেগোনা কয়েকবার। বেশিরভাগ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন দিয়েই চলছে প্রকল্পের কাজ। এমনকি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কারও দেখা মেলে না কাজের সময়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ফজল নামে এক স্থানীয় যুবক থেকে নেওয়া হচ্ছে প্রকল্পের নিম্নমানের সামগ্রী। এসব সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় প্রকল্পের মান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

জানা যায়, জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থায়নে পাওয়া প্রকল্পটি করোনার আগে দরপত্রের মাধ্যমে পাস হয় চসিকে। এ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৫ টাকা। প্রকল্পের অধীনে ২২টি রোড, ২৩টি ড্রেন ও রাস্তা উন্নয়নের কাজ করার কথা রয়েছে। মাত্র চার মাসের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

৪০ শতাংশ নির্মাণকাজ ‘শেষের পথে’— এটা দেখাতে বিচ্ছিন্নভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে।
৪০ শতাংশ নির্মাণকাজ ‘শেষের পথে’— এটা দেখাতে বিচ্ছিন্নভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সিটি কর্পোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেখা যায় না এখানে। তিন বস্তা পাথর, দেড় বস্তা বালু ও এক বস্তা সিমেন্টের মাধ্যমে ঢালাই করার কথা এ প্রকল্পে। কিন্তু এ নিয়ম না মেনে সিমেন্ট কম দিয়ে ঢালাই করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বাকি আড়াই মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করারও সুযোগ নেই বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

বিজয়নগর এলাকার একজন ছাত্রনেতা বলেন, ‘জাইকার কাজ হলেও তাদের লোকজনের দেখা নেই। নেই সিটি কর্পোরেশন লোকজনও। কর্পোরেশনকে ৪০ শতাংশ কাজ দেখিয়ে বিল নেওয়ার আশায় এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করার কারণে জনদুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। মনগড়াভাবে চলছে এ প্রকল্পের কাজ।’

নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে প্রকল্পের কাজ চালানোর বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার মঈন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। কাদের কাছ থেকে এসব সামগ্রী কেনা হচ্ছে আমি খবর নিচ্ছি। স্থানীয় কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের সামগ্রী নেওয়ার কথা ছিল না। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে দুর্ভোগের বিষয়টি দেখছি।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সিভিল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অসীম বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক নির্মাণকাজ চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করে জনদুর্ভোগের বিষয়ে খবর নেওয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিজয়নগর এলাকায় জাইকার অর্থায়নে কাজ শুরু হয়েছে দেড় মাস আগে। নির্মাণকাজ ঠিকঠাক মতো করার জন্য সিভিল বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোনো ধরনের অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। এরপর দ্রুত সময়ে কিভাবে কাজটি শেষ করা যায় তারও খোঁজ নিচ্ছি।’

প্রকল্পের কাজ ধীরগতি চলার প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম সুজন আরও বলেন, ‘নির্মাণকাজে ধীরগতি কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!