অর্ধেক বিল নিয়ে কাজই বন্ধ করে দিল ঠিকাদার

চার অর্থবছরেও শেষ হয়নি রাঙামাটি বরকল উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম নির্মাণকাজ। চারতলা ভবনটির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কাজ শেষ করেই ফেলে রাখা হয়েছে। অথচ ‘চলতি বিল’ দেখিয়ে বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক টাকাও তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে বরকলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার জন্য এলজিইডি ও ঠিকাদার পরস্পরকে দুষছেন। ঠিকাদার বলছেন, ‘হলরুমের নকশা না পাওয়ায় কাজ বন্ধ আছে।’ আর এলজিইডি বলছে, ‘কাজ না করলে ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’ তবে এ দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অবহেলাকেই দায়ী করেছেন বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

প্রকল্পটির বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ৮২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লুম্বিনী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী চিরঞ্জীব চাকমা কাজটি পান। কাজটি বাস্তবায়নের সন ছিল ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছর। ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি প্রায় অর্ধেক টাকা ‘চলতি বিল’ বাবদ উত্তোলন করে নিয়েছে।

নির্মাণ প্রকল্পের সাইনবোর্ড
নির্মাণ প্রকল্পের সাইনবোর্ড

অথচ চার তলা ভবনটির কাঠামো তৈরি করে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। তিন তলার ছাদ আর কলাম তৈরি করলেও চতুর্থতলার ছাদের কাজ শুরুই করেনি। এমনিক হলরুমের কাজে এখনও হাতই দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন খোলা জায়গায় পড়ে থাকায় ইটের স্তুপে শ্যাওলা ধরে বিবর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া যেটুকু কাজ শেষ হয়েছে তারও নির্মাণকাজের গুণগতমান ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করারও অভিযোগ আছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পটির দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত বরকল উপজেলা এলজিইডির কর্মকর্তাদের প্রচ্ছন্ন মদদেই কাজটি বন্ধ রাখার সুযোগ নিয়েছেন ঠিকাদার। তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কাজের অগ্রগতি দেখিয়ে কাগজপত্রও ঠিক রাখছেন। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা বরং এলজিইডির প্রধান কার্যালয় থেকে ঠিকাদারের পক্ষে প্রকল্পটির ‘টাইম এক্সটেনশন’ করার জন্যও তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এলজিইডি ও ঠিকাদারের অবহেলাকে দায়ী করছেন বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিধান চাকমা। তিনি বলেন, ‘ভবন ও হলরুম নির্মাণকাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছি। ঠিকমত অফিস করতে পারছি না। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দিলেও কোন লাভ হয়নি।’

কাজে অবহেলার কারণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারকে ফোন দিলেও ধরেন না। খুব মন্থরগতিতে কাজ চলছে। কাজের এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী মাসে মিটিংয়ে ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’

তবে কাজের ধীরগতি নিয়ে ঠিকাদার দুষছেন এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে। ঠিকাদার চিরঞ্জীব চাকমা জানান, ‘বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে তিনি নির্মাণকাজটি যথাসময়ে সম্পন্ন করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘এলজিইডি কর্তৃপক্ষ তাকে হলরুমের নকশা না দেওয়ার কারণে কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!