অভিষিক্ত মায়ারসের কাছেই ‘লাকি ভেন্যু’ চট্টগ্রামে বাংলাদেশের হার

জীবণের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের সামনে এমন পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে যাবেন সেটি কেউ ভাবেননি। কিন্তু বাংলাদেশের পয়মন্ত ভেন্যু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিকালের সব আলো কেড়ে নিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইল মেয়ারস। তার অপরাজিত ২১০ রানের বদৌলতে ৩৯৫ রানের পাহাড় ডিঙিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

তিন উইকেটের অবিশ্বাস্য এই জয়ে বাংলাদেশের ‘খলনায়ক’ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের নায়ক কাইল মায়ারস ও এনক্রুমার বোনার নামের দুই অচেনা যুবক।

সাগর পাড়ের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের পঞ্চম দিনটি বাংলাদেশের জন্য এতোটা বিষাদময় হবে হয়তো কেউই সেটা ভাবেননি! আনন্দের ঢেউ বইয়ে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দশ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আনন্দের পালে হাওয়া লাগার কথা ছিল। টেস্টে বাংলাদেশ সাফল্য পায় কালেভদ্রে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখনো জয় তো দূরের কথা, ড্র পর্যন্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। এসব আক্ষেপে হালকা প্রলেপ পড়বে তেমনটাই প্রতাশা ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম চার দিন শেষে জয়ের যে একদমই কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে ক্যারিবিয়ানদের সামনে ৩৯৫ রানের পাহাড়সম লিড দাঁড় করিয়েছিল মুমিনুল হকের দল। বাংলাদেশের লিডটা কতোটা নিরাপদ ছিল পরিসংখ্যান ঘাটলেই বুঝা যায়। টেস্ট ইতিহাসে অতীতে এশিয়ায় এতো রান তাড়া করে জিততে পারেনি কোনো দল। এতোকিছুর পরও কিনা পঞ্চম দিনের সকালের আনন্দ ছাপিয়ে টাইগার শিবিরে বাজল বিষাদের বিউগল।

চট্টগ্রাম টেস্টের আগে কেই-ই চিনত অভিষিক্ত কাইল মায়ারস ও এনক্রুমার বোনার দুজনকে! এরা দুজনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তিনটি ওয়ানডে খেলে সুবিধা করতে পারেননি। দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। বাংলাদেশে ‘করোনার ভয়’ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে না নিলে এই যাত্রায় হয়তো জাতীয় দলের হয়ে বিদেশ সফরে আসা হতো না মায়ার-বোনারদের! সিনিয়রদের অনুপস্থিতি দলে ডাক পেলেন, টেস্টে অভিষেকও হয়ে গেল। সেই তারাই কিনা হারিয়ে দিল বাংলাদেশকে, মিরাকল!

টেস্টের প্রথম চার দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩ উইকেটে ৪৭ রান নিয়ে মেয়ারস আর বোনার যখন পঞ্চম দিন শুরু করলেন তখনও কেই-বা ভেবেছিলেন তারপর শুধু বিস্মিত হবার পালা। মেয়ারস আগের দিনে ৩৭ বলে ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন। উইকেটে যেভাবে স্পিন ধরছিল তাতে মিরাজ-তা্ইজুলদের বিপক্ষে ওয়ানডে মেজাজে খেলতে থাকা মেয়ারস পঞ্চম দিনে বেশিদূর এগুতে পারবেন সেটা মনে হয়নি। এই মায়ারের হাতেই জয়ের স্বপ্ন সলীল সমাধী হয়েছে বাংলাদেশের।

ভালো বল সমীহ করছিলেন। তবে একটু আলগা বল পেলে সীমানাছাড়া করতেও কৃপণতা করছিলেন না। তবুও বাংলাদেশ দল নিশ্চয় মনে মনে ভাবছিল, এই বুঝি গেল গেল। চলছিল যে পঞ্চম দিনের খেলা। বল হঠাৎই বাউন্স করছিল, বড় টার্ন করছিল আবার হঠাৎ নিচুও হচ্ছিল। এসব মোকাবিলা করে বোনারকে সঙ্গে নিয়ে ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ করে চতুর্থ উইকেটে ২১৬ রানের জুটি গড়েন মেয়ারস। দুজনই অভিষিক্ত, এটা বিশ্বরেকর্ড। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুই অভিষিক্তর সর্বোচ্চ জুটির বিশ্বরেকর্ড এটা। বোনার আগের দিনের মতোই ধীরেলয়ে খেলে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ফিরেছেন ঠিকই তবে বাংলাদেশের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়াতে তার অবদানও অনেক। দুজনের ২১৬ রানের জুটিতেই জয়ের কাছাকাছি পৌছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!