অভাগা শিশু ১৪ মাস বয়সে দেখেছে মায়ের খুন, ৫ বছরে শুনলো বাবার ফাঁসি

৫ বছর বয়সী শিশু হামদু মিয়া। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) তার নানুর হাত ধরেই এসেছিলেন চট্টগ্রাম আদালতে। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো তার জন্মদাতা পিতা সানু মিয়া। আদালতে বিচারক সানু মিয়ার ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন। কিন্তু অবুঝ শিশুটির দুনিয়ার কোন বাছবিচার বুঝার বয়স এখনো হয়নি। জন্মদাতাকে আব্বু ডাকার সৌভাগ্য টুকুও তার হয়নি। মাকেও ডাকতে পারেনি মা বলে।

কারণ, ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি হামদু মিয়ার বয়স যখন ১৪ মাস তখন তার সামনেই তার জন্মদাতা পিতা সানু মিয়া খুন করেন মা ইতি বেগমকে। সেই থেকে হামদু বড় হতে থাকেন নানীর কোলে।

দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৭ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মুন্সি আব্দুল মজিদের আদালত ইতি বেগমকে হত্যার দায়ে স্বামী সানু মিয়ার মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেন। পাশাপাশি শানু মিয়ার সম্পত্তি থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়ার আদেশ দেন। এই টাকা ইতি বেগমের ছেলে হামদু মিয়া জন্য তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পিপি খন্দকার আরিফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের-১১ (ক) ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ইতি বেগম হত্যার একমাত্র আসামি সানু মিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডাদেশও দেওয়া হয়।

তিনি আরো জানান, পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় এ মামলায় ১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। প্রত্যেক সাক্ষীকে থানা নিয়ার আইনজীবীগণ জেরা করেছিলেন। আদালত রায় ঘোষণার সময় সানু মিয়া এবং তার আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি যৌতুকের জন্য মারধর ও নির্যাতন করে স্ত্রী ইতি বেগমকে হত্যা করেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সানু মিয়া। এ ঘটনায় হত্যার শিকার ইতি বেগমের বোন বাদী হয়ে সদরঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সানু মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার সিরাজ মিয়ার ছেলে। তার হাতে খুন হওয়া স্ত্রী ইতি বেগম ছিলেন ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদরঘাট থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহজাহান ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন আদালতে।

মামলার রায়ের পর মামলার বাদী খুরশিদা আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যরা এই রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে শিগগিরই রায় কার্যকরের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!