অবৈধ সম্পদ/ দুদকের জালে ধরা স্ত্রীসহ ট্রাফিক পরিদর্শক

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের দায়ে ফেঁসে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের সাবেক ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) আবুল কাশেম। একই সঙ্গে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। দুজনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত অর্জিত ৫৫ লাখ ২২ হাজার ৪৬৩ টাকাসহ আবুল কাশেমের নামে-বেনামে স্থাবর সম্পত্তি থাকার খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

২০১৮ সালের টিআই আবুল কাশেম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর প্রচার হওয়ার সূত্র ধরে তার বিরুদ্ধে সম্পদবিবরণী অনুসন্ধান করার তদন্ত শুরুর অনুমতি পায় দুদক।

অভিযুক্ত আবুল কাশেম চৌধুরী ফেনী জেলার পরশুরাম থানার বাঘমারা গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমান চৌধুরীর পুত্র। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর চুনাফ্যাক্টরীর মোড় দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার ১১৪৮/ডি নম্বর বাড়িতে থাকেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবুল কাশেম চৌধুরী একজন নিয়মিত আয়করদাতা। ২০০৫-২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি করবর্ষে আয়কর প্রদান করেন। ১৯৮৫ সালে আবুল কাশেমের চৌধুরী বাংলাদেশ পুলিশ সাজেন্ট পদে চাকরি নেন। ২০০৫ সালে তিনি পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০১১ সালের ২১ জুলাই থেকে ২০১২ সালের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যান। এছাড়া তার স্ত্রী ফাতিমা বেগম ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে একটি তিশা নামে একটি বিউটি পার্লার ব্যবসা শুরু করেন। তিনিও নিয়মিত আয়করদাতা ছিলেন। আবুল কাশেমের এক ছেলে ও তিন মেয়ে। বর্তমানে একমাত্র ছেলে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা করছেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, আবুল কাশেমের নিজ নামে স্থাবর-অস্থাবর মোট ২৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪০৪ টাকার সম্পদ রয়েছে। পারিবারিক ব্যয় ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৫ টাকা। তার নিজ নামে কোন দায় না থাকায় পারিবারিকসহ যোগ করলে তার অর্জিত সম্পদ দাঁড়ায় ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৯ টাকা। এছাড়া ওই সম্পদের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় আরও ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৯ টাকা। তার সম্পদের আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে ১২ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ টাকা প্রাথমিকভাবে অসামঞ্জ্যপূর্ণ পাওয়া যায়। এছাড়া তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে তার নামে-বেনামে সম্পদ থাকারও খোঁজ পায় দুদক।

এছাড়া তার স্ত্রী ফাতিমা বেগমের অস্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ রয়েছে এক কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ১২৪ টাকা। তার বিপরীতে ঋণ আছে ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৫৪ টাকা। তার ব্যয় ও ঋণ পরিশোধসহ মোট অর্জিত সম্পদ দাঁড়ায় এক কোটি তিন লাখ ৮৮ হাজার ৫৭০ টাকা। একই সময়ে ঋণ পরিশোধ ও পারিবারিক ব্যয় করেছেন ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৬ টাকা। অর্থাৎ পারিবারিক ব্যয় ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধসহ মোট সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৫৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৬৬ টাকা। এ সম্পদের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে এক কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ টাকা। এক্ষেত্রে ৪৩ লাখ ৫ হাজার ৫১৩ টাকা আয়ের উৎস কম পাওয়া যায়।

দুদকের অনুসন্ধানে আবুল কাশেম ও তার স্ত্রী ফাতিমা বেগমের মোট ৫৫ লাখ ২২ হাজার ৪৬৩ টাকা জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের খোঁজ পেয়েছে দুদক।

এদিকে চট্টগ্রামে ট্রাফিক পরিদর্শক থাকাকালীন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং ২০১২ সালের ৫ জুলাই আবুল কাশেমের ফেসবুক একাউন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আপত্তিকর পোস্ট শেয়ার করার অভিযোগে চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলা দায়ের করেন গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড যুবলীগের সহ দপ্তর সম্পাদক শেখ আহম্মদ। এরপর ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর স্ট্যান্ডরিলিজ করে রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয় ট্রাফিক পরিদর্শক আবুল কাশেম চৌধুরীকে।

সূত্রে জানা যায়, আয়বর্হিভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন রাখার অভিযোগ দুদকের তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রামের আরো বেশ কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা। ৬-৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলা থাকায় ট্রাফিক পুলিশের মাসিক স্লিপ বাণিজ্য, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি মালিকদের কাছে স্লিপ বিক্রি করে সাত কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ উঠেছে এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে রয়েছে টিআই মীর নজরুল, টিআই শাহাদাত, টিআই জসিম উদ্দিন ও বন্দর সাজেন্ট আশিকুজ্জামানের নামও।

দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ চট্টগ্রামের উপ পরিচালক লুৎফর কবীর চন্দন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, টিআই আবুল কাশেম ও তার স্ত্রী ফাতিমা বেগমের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদের রাখার খোঁজ পেয়েছে দুদক। এছাড়া তাদের নামে-বেনামে সম্পদ থাকারও অভিযোগ মিলেছে। কয়েকদিন আগে তাদের সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে। তদন্তে যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

লুৎফর কবীর চন্দন আরও জানান, টিআই কাশেমসহ আরো বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের খোঁজে কাজ করছে দুদক। এর মধ্যে কয়েকজনের তথ্য উপাত্ত ইতোমধ্যে হাতে এসেছে। শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানান তিনি।

এর আগে, দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপসহকারী পরিচালক নুরুল ইসলামের অনুসন্ধান করা, প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে টিআই আবুল কাশেম চৌধুরী ও তার স্ত্রী ফাতিমা বেগমের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী নোটিশ ইস্যু করার সুপারিশ চেয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!