জেলে যেতেই হবে মীর নাছির ও হেলালকে

অবৈধ সম্পদ অর্জনে জেল-জরিমানা আপিলেও বহাল

ওয়ান ইলেভেনে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দায়ের করা মামলায় বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন ও তার ছেলে মীর হেলাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে দেওয়া জজ আদালতের সাজা হাইকোর্টেও বহাল থাকলো। হাইকোর্টের এই রায় জজ আদালতে পৌঁছার দিন থেকে ৩ মাসের মধ্যেই পিতা-পুত্র দুইজনেই আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আপিল বিভাগের আদেশে এ মামলায় পুনরায় শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাইকোর্টের যৌথ বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেন। এর আগে ২০০৭ সালের ৪ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এর বিচারক অমর কুমার রায় মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিনকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাবার কাজে সহযোগিতা করার অপরাধে ছেলে বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী সদষ্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের জেল দেওয়া হয়। এছাড়া অবৈধভাবে অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) হাইকোর্টে মীর নাছির ও তার ছেলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রায়ের পর খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের এই রায় জজ আদালতে যেদিন পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৩ মাসের মধ্যে দুই আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি আপিল করেন তাহলে আসামিদের তার আগে আত্মসমর্পণ করতে হবে।’

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মীর নাছির। ওই বছর মার্চে মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করে দুদক। কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপন ও ঘোষিত আয়ের বাইরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়।

পরের মাসেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদকের তখনকার উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ। সেখানে ৩ কোটি ২২ লাখ ১১ হাজার ৬৩৭ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপন এবং ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৭ টাকার অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক অমর কুমার রায় ২০০৭ সালের ৪ জুলাই যে রায় দেন, সেখানে নাছিরকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর বাবার দুর্নীতিতে সহযোগিতা করায় হেলালকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের জেল দেওয়া হয়। পাশাপাশি অবৈধভাবে অর্জিত দুই আসামির সমস্ত সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে সরকারকে নির্দেশ দেয় জজ আদালত।

সেই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে আলাদাভাবে আপিল করেন বাবা ও ছেলে। হাইকোর্ট ২০১০ সালের ১০ আগস্ট মীর নাছির এবং একই বছরের ২ অগাস্ট মীর হেলালের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। দুদক হাইকোর্টের ওই রায় বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। ২০১৪ সালের ৪ জুলাই দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায় বাতিল করে নতুন করে হাইকোর্টে আপিল শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘ শুনানির পর মীর নাছির ও মীর হেলালের আপিল খারিজ করে মঙ্গলবার রায় দিল হাইকোর্ট।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!