অবৈধ সম্পত্তি: কাঠগড়ায় যেতে হবে লোহাগাড়া-সন্দ্বীপের সাবেক ওসি শাহজাহানকে

৭৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রামে মো. শাহজাহান নামে পুলিশের এক পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ৫০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগও আনা হয়।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক রতন কুমার দাশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। শেষ পর্যন্ত অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে সন্দ্বীপ ও লোহাগাড়ার সাবেক এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।

অভিযুক্ত মো. শাহজাহান বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত আছেন। তিনি কুমিল্লা জেলার লালমাই থানার হাজাতখোলা বাজার কাতালিয়া গ্রামের সুলতান আহমদের ছেলে তিনি। তবে বর্তমানে তিনি পরিবারসহ চট্টগ্রামের খুলশী থানার দামপাড়া ১৪ হাইলেভেল রোড লালখানবাজার এলাকায় বসবাস করছেন।

দুদক কর্মকর্তা রতন কুমার দাশ জানিয়েছেন, দুদকের পাঠানো নোটিশের প্রেক্ষিতে শাহজাহানের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী অনুসন্ধানে ৪৯ লাখ ৩৯ হাজার ১২৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে পুলিশ পরিদর্শক শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৭৮ লাখ এক হাজার ৫২০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন। এই সম্পদ তিনি স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরপূর্বক ভোগদখলে রেখেছেন।

১৯৯০ সালে চাকরি শুরুর পর থেকে মো. শাহজাহানের নামে সর্বমোট ২ কোটি ৬৪ লাখ ২৭ হাজার ৭০০ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৭ টাকা ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

চাকরি নেওয়ার পর থেকে তার বৈধভাবে আয় ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৬ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে তিনি ব্যয় করেছেন ২৬ লাখ টাকা ১২ হাজার ৪৭৩ টাকা। সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদের পরিমাণ মিলেছে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৩ হাজার ৮১০ টাকা।

এছাড়া তার স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারের নামে সর্বমোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৭ টাকা। এর মধ্যে বৈধ আয় ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৫ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে তিনি ব্যয় করেছেন ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৩০ টাকা। সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৩ লাখ ২ হাজার ৬৯২ টাকা জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে প্রাথমিকভাবে।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লোহাগাড়া থানায় কর্মরত থাকাকালে ওসি শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে দুদকের প্রধান কার্যালয় বরাবরে অভিযোগ পাঠান মো. হারুন নামে এক ব্যক্তি। এ অভিযোগের পর দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ তদন্ত শুরু করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালের ১২ জুন লোহাগাড়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে নানা অনিয়ম, গ্রেপ্তার বাণিজ্য, মামলা ও হুমকির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগে সমালোচিত হতে থাকেন এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ লোহাগাড়া থানা হেফাজতে থাকা এক ফৌজদারি মামলার আসামিকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন এই ওসি। এরপর গত জুন মাসে ওসি শাহজাহানকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ট্যুরিস্ট পুলিশে বদলি করা হয়।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!