অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু, ডাক্তারের দাবি মায়ের পেটেই আঘাত পেয়েছিল

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে সিজারের পর এক নবজাতকের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে এ নবজাতকের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।

পারিবারের দাবি, চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলার কারণে এমনটি হয়েছে। নবজাতকের গায়ে ‘কাটার চিহ্ন’ রয়েছে। যদিও এটিকে কাটার চিহ্ন বলছেন না চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, নবজাতক মায়ের পেটেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।

মৃত নবজাতকের পিতা মো. সজীব বলেন, ‘বুধবার রাতে আমার স্ত্রীকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। বৃহস্পতিবার সকালে অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশন শেষে দিকে বাচ্চার গায়ে কাটার দাগ দেখতে পাই। কিছুক্ষণ পর বাচ্চা মারা যায়। আমরা এটার বিচার চাই। কোনো আইনি পদক্ষেপ নেবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মামলা করবো না।’

সজীবের পিতা মো. সজীব মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে সিজারের পর আমার নাতি মারা গেছে। তার শরীরের তিনটি স্পটে দাগ আছে। নরমাল ডেলিভারি হলে বাচ্চা হয়ত আঘাত পেতো না, মারাও যেত না। আমরা চাই আমার কেউ যেন এমন ভুক্তভোগী না হন।’

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে নবজাতককে তাড়াহুড়ো করে পাশের কক্ষে নেওয়া হয়। পরে শোনা যায় শিশুটি মারা গেছে।

এদিকে দুপুর প্রায় পৌনে ১টার দিকে মৃত নবজাতকের পিতা ও দাদির সঙ্গে প্রায় ১৫ মিনিটের বৈঠক করেন হাসপাতালের আরএমও ডা. শওকত আকবর ও গাইনি কনসালটেন্ট তাহমিনা দেওয়ান। বৈঠক শেষে নবজাতক নিয়ে বের হয়ে যান দাদি ফিরোজা বেগম।

মৃত নবজাতকের দাদি ফিরোজা বেগম জানান, সিজার করলে কাটাকাটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাচ্চার মা হবে। বাচ্চার ক্ষতি কেন হবে? সরকারি হাসপাতালগুলোতে মানুষের জীবনের গ্যারান্টি নেই।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. তাহমিনা দেওয়ান বলেন, ‘গতকাল বুধবার রাতে প্রসূতি নারীকে হাসপাতালে আনা হয়। আমরা নরমাল ডেতিভারির জন্যই চেষ্টা করেছি। কিন্তু সকাল নয়টার দিকে প্রসূতির শরীর থেকে পানির সঙ্গে মলও আসতেছে। তখন আমরা জানালাম এটা নরলাম ডেলিভারি করা যাবে না। সিজারিয়ান ডেলিভারি করতে হবে। বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনায় দশ মিনিটের মধ্যেই আমরা অপারেশনের প্রস্তুতি নিই। কিন্ত অপারেশন শেষে নবজাতক জীবিত থাকলেও কিছুক্ষণ পরে মারা যায়। আমাদের চেষ্টার কমতি ছিল না।’

বাচ্চার গায়ের দাগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা তাহমিনা বলেন, ‘এটি আসলে কাটার দাগ নয়। আমাদের অপারেশনে এক ধরণের ব্লেড ব্যবহার করা যায়। ব্লেডে কাটা গেলে হালকা কিংবা গভীর ক্ষত তৈরি হবে। আমরা ধারণা করছি, মায়ের পেটে ইঞ্জুরির কারণে এমনটা হয়েছে।’

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শওকত আকবর বলেন, ‘চিকিৎসকদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও নবজাতককে বাঁচানো গেল না। সিজারের পর থেকেই বাচ্চার অবস্থান ভালো ছিল না।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!