অবসরের ৪ বছরেও পাওনা মিলছে না জিইএম কোম্পানির দুই শতাধিক শ্রমিকের

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানা এলাকায় জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের (জিইএম) থেকে অবসর গ্রহণ করার পরও তাদের পাওনা পরিশোধ না করায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।এই প্রতিষ্ঠান থেকে জনপ্রতি প্রায় ১৫ লাখ বকেয়া পাওনার মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা।

এ বিষয়ে জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাওনা গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড দেয়ার মত অর্থ নেই। তবে চেষ্টা করছি তাদের পাওনা পরিশোধ করার। জিইএম কোম্পানি দীর্ঘ ধরে লোকসানে ছিল। এতোগুলো টাকা কোথা থেকে দেবে?’

অভিযোগ রয়েছে, স্ট্রোল ক্যাডারদের অবসরের যাওয়ার ২-৩ মাসের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধ করা হলেও চট্টগ্রামের শ্রমিকদের অবসরের যাওয়ার ৪ বছরেও পাওনা পরিশোধ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, গত ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরে উত্তর পতেঙ্গায় বাংলাদেশ ইস্পাত করপোশেন আওতাধীন জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড থেকে প্রায় দুই শতাধিক কর্মচারী-কর্মকর্তারা অবসর গ্রহণ করে। এদের সবাই ৪০-৪২ বছর ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রত্যেকের গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফাউন্ড ও অন্যান্য বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। বকেয়া পরিশোধ নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে, দেনদরবার বা চিঠিপত্র দিয়েও এর কোন সুরাহা হয়নি। এতে অবসর নেয়ার দীর্ঘ সময় পার হলেও বকেয়া পাওনা টাকা না পাওয়ায় সবাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

শ্রম আইন ২০০৬—এর ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কোন শ্রমিক অবসর গ্রহণ করার ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করার বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবহলো ও একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে দীর্ঘ ৪ বছরেও শ্রমিকের পাওনা পরিশাধ করা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশ ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস, বিসিআইসি ফেডারেশন, বিএমসিসি আওতায় সিবিএ ও নন সিবিএ নেতারা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, জিইএম প্ল্যান্টের প্রায় ১৬৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ চলতি বছরে আরও নতুন করে বেশ কয়েকজন অবসর গ্রহণ করেছেন। ২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত অবসরে যাওয়া ব্যক্তিদের আংশিক পাওনা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫ কোটি টাকা এখনো পাওনা রয়েছে। এতে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

পতেঙ্গা হালিশহর অঞ্চল জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জিইএম প্ল্যান্টে দীর্ঘ ৪০-৪২ বছর চাকরি শেষ করে বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করা দুঃখজনক। প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া সমস্ত পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট অথোরিটিকে জানানো হয়েছে। গত ৪ বছরে এর কোন সমাধান হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর অবসর নেয়া ব্যক্তিরা একযোগে জিইএম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অফিস ঘেরাও করেন। এ সময় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের পাওনা পরিশোধের জন্য দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেন। কিন্তু সেই থেকে এখনো পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে পাওনা আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল জব্বার আরও বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় ধরে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল না থাকায় ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসার কার্যক্রম চালায়। ব্যবসার লোকসান হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করায় অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করা হয়। শীঘ্রই সবার সমস্ত পাওনা পরিশোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘১৯৮০ সালে এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ইনকামলেস ছিল। কোন অর্ডার ছিল না। এখন এই প্রতিষ্ঠানে সৌদি আরবের ইনভেস্টমেন্ট আসছে এবং অর্ডারও হচ্ছে। একটা ভাল ইনকামের পথে হাঁটছে প্রতিষ্ঠান। আশা করি আর সমস্যা থাকবে না। আগামী নভেম্বর থেকে সবার পাওনা পরিশোধ করা হবে।’

মুআ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!