তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেয়ে অবৈধভাবে আরো ৪ বছর ওয়াসার বোর্ড সদস্যের পদ দখল করে থাকা সেই সোলায়মান শেঠ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সোলায়মান আলম শেঠের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে ‘গ্রাহক প্রতিনিধি’ মনোনয়নের জন্য ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব সাঈদ উর রহমান।
অন্য একটি আদেশে ভোক্তা প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির জন্য কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রেরিত একটি চিঠি আমলে নিয়ে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মতামত প্রদানের জন্য ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ২৯ জুলাই জারিকৃত এক আদেশে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বলা হয়, পানি ব্যবহারকারীদের ‘গ্রাহক প্রতিনিধি’ হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের সদস্য সোলায়মান আলম শেঠের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ ওই পদে নিয়োগের লক্ষ্যে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পানি ব্যবহারকারীদের একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন করে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রাহক প্রতিনিধি কোটায় স্থানীয় সরকার বিভাগ সোলায়মান আলম শেঠকে ২০১২ সালে নিয়োগ দিলেও সেই মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে নতুনভাবে নিয়োগ কিংবা তার নিয়োগের মেয়াদ বর্ধিত করেনি। এদিকে ওয়াসা কর্তৃপক্ষও তাকে এই পদে বহাল রাখে। ‘গ্রাহক প্রতিনিধি’ হয়ে সোলায়মান আলম শেঠ গ্রাহকদের স্বার্থ না দেখে ওয়াসা এমডি এবং ঠিকাদারদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতেন বলে অভিযোগ আছে। মাঝেমধ্যে নিজস্ব লোক দিয়ে সাজানো গ্রাহক সমাবেশের আয়োজন করতেন। সোলায়মান আলম শেঠের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠে খোদ ওয়াসার বোর্ড সভায়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অপর একটি আদেশে বলা হয়, ওয়াসা বোর্ডের পানি ব্যবহারকারীদের সদস্য হিসেবে ভোক্তা প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির জন্য কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কর্তৃক অনুরোধ করা হয়। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের পানি ব্যবহারকারীদের সদস্য হিসেবে ভোক্তা প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত ক্যাবের পত্রের বিষয়ে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে মতামত প্রদানের জন্য ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ১৮ জুন ক্যাবের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর প্রদত্ত এক চিঠিতে বলা হয় ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদে পানি ব্যবহারকারী ভোক্তাদের কোন প্রতিনিধি নেই। দেশের স্বীকৃত ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের কোন প্রতিনিধিও চট্টগ্রাম ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদে না থাকায় সাধারণ ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বর্তমান ওয়াসা বোর্ডে যিনি গ্রাহক প্রতিনিধি আছেন তিনি অবৈধভাবে পদ দখল করে আছেন। তার মাধ্যমে প্রাহকদের কোন সার্থ সংরক্ষণ হয়নি।এসব বিষয় আমরা ক্যাবের পক্ষ থেকে সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের নজরে আনি। সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন গ্রাহক প্রতিনিধি মনোনয়নের নির্দেশনা দেন। সেই সাথে ক্যাবের একটি চিঠির বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং এমডিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। আমরা মনে করি এই আদেশের মধ্য দিয়ে ওয়াসা বোর্ডে গ্রাহকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। গড়িমসি না করে সরকারি এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী কে এম ফজলুল্লাহর মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এসসি/এসএস