অপহরণ নাটক, স্বর্ণের দোকানের ১২ লাখ টাকা মেরে লুকিয়ে ছিল কর্মচারী

শুক্রবার সকালে এটিএম বুথ থেকে ১২ লাখ টাকা তুলে বাসায় ফিরছিলেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ আখতারুজ্জামান সেন্টারের দি সন্দ্বীপ জুয়েলার্সে কর্মচারী সুদীপ্ত সাহা প্রকাশ টিংকু (৩৫)। তখনই ডিবি পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয় তাকে। হাত ও চোখ বেঁধে হুমকি দেয় ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর। এরপর বান্দরবানের পাহাড়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।- আসলে গল্পটা এমন নয়। তাকে আসলে ডিবি পরিচয়ে কেউ তুলে নিয়ে যায়নি। মালিকের টাকা আত্মসাৎ করতে এই গল্প সাজায় টিংকু নিজেই। কিন্তু পুলিশের তদন্তে টিংকুর এই অপহরণ নাটক ধরা পড়ে যায়।

শনিবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২ টায় ডবলমুরিং থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (পশ্চিম) মো. আব্দুল ওয়ারীশ।

তিনি জানান, সিসিটিভি ক্যামেরার একটি ফুটেজে সন্দেহের তীর ঘুরে যায় কর্মচারী টিংকুর দিকেই। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বীকার করেন, নিজেই সরিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। মালিককে বিশ্বাস করাতেই সাজিয়েছেন এই নাটক। মধ্যরাতে টিংকুর বোনের বাসা থেকে টাকা উদ্ধারের পর শেষ হয় সব জল্পনা-কল্পনার। এরপর তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতার টিংকু চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন বাড়ীর অসীম সাহার ছেলে। তার বিরুদ্ধে প্রদীপ বণিক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

আব্দুল ওয়ারীশ বলেন, ‘দি সন্দ্বীপ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারি প্রদীপ বণিকের অভিযোগ ছিল পুলিশ পরিচয়ে তার ১২ লাখ টাকা লুট করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা বিশ্লেষণ করে শেষ পর্যন্ত সেই টাকা উদ্ধার করা হয় তারই কর্মচারী টিংকুর কাছ থেকেই।’

এই বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘টিংকু প্রদীপ বণিকের খুবই বিশ্বস্ত কর্মচারী। তার এটিএম কার্ডের সব পিনই টিংকুর জানা ছিলো। আগের দিন রাতেই তার চারটি এটিএম কার্ড টিংকুকে দিয়ে দেন প্রদীপ। পরদিন ১২ লাখ টাকা তুলে ১১টায় বাসায় ফেরার কথা তার। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত না আসায় এবং ফোন বন্ধ পাওয়ায় তার খোঁজ শুরু করেন প্রদীপ। এরপর ৪টায় ফোন করে টিংকু জানান, সকাল সাড়ে ১১ টাকার দিকে আগ্রাবাদ সিএন্ডএফ ভবনে অবস্থিত একটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে আসার সময় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস তার সামনে থামে। এসময় নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ৪-৫ জন লোক তাকে গাড়িতে উঠতে বলে। তিনি গাড়িতে উঠতেই তার সাথে থাকা ১২ লাখ টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তার কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে মামলা দেওয়ার ভয় ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে গাড়ি বান্দরবানে গিয়ে থামে। সেখানে হাত ও চোখ বেঁধে তাকে পাহাড়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

ওসি মহসীন আরও বলেন, ‘টিংকু খুবই চালাক। এ ঘটনা পুলিশকে জানালেও তার কল লোকেশন যেন বান্দরবান আসে সেজন্য নিজেই সেখানে চলে যান। আবার সিসিটিভি ফুটেজে তার বর্ণিত সেই মাইক্রোবাসও বুথ অতিক্রম করতে দেখা যায়। কিন্তু সেই গাড়িতে তাকে তুলে নেওয়ার তথ্য না পাওয়ায় সন্দেহ জাগে টিংকুর উপর। এরপর লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন তিনি। এরপর তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকায় তার বোনের বাসা থেকে ১১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এভাবে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার করা হয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ১২ লাখ টাকা।’

পুলিশেরসংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ কমিশনার পংকজ দত্ত , সহকারী কমিশনার মোঃ মাহামুদুল হাসান মামুন,অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসীন, পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা, উপ পরিদর্শক নিপু বিশ্বাস, মো. শরীফ উদ্দিন, অর্ণব বড়ুয়া, সহকারী উপ পরিদর্শক কাজী সাইফুল, সাদ্দাম হোসেন।

আরএ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!