অপরাধের আখড়া চট্টগ্রাম মেডিকেলের স্টাফ কোয়ার্টার, ভাড়াতেই মাসে আয় ১০ লাখ টাকা

চার সমিতি ছাড়াও টাকার ভাগ যায় বড় কর্তাদের পকেটে

নিয়মিত মাদক ও জুয়ার আসর বসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) স্টাফ কোয়ার্টারে। সরকারি খরচে বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়া এসব কোয়ার্টার আবার অবৈধভাবে ‘ভাড়া’ দিয়ে একটি চক্র প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে অন্তত ১০ লাখ টাকা। চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে আবাসিক কোয়ার্টার। হাসপাতালের পশ্চিম পাশের গোয়াছি বাগান সংলগ্ন এসব কোয়ার্টারের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসসহ অন্যান্য সুবিধা। প্রতি মাসে চমেকের তহবিল থেকে এর পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হলেও মূলত চমেকের চার সমিতির ‘নির্দেশনা’য় চলে এসব আবাসিক কোয়ার্টারে ‘উপ-ভাড়া’র রমরমা ব্যবসা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত স্টাফ ও কর্মচারীদের এই চার সমিতি হল— তৃতীয় শ্রেণী মেডিকেল সরকারি কর্মচারী সমিতি, চতুর্থ শ্রেণী মেডিকেল সরকারি কর্মচারী সমিতি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্টাফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে জানা গেছে, চমেক স্টাফ কোয়ার্টারের প্রতিটি কক্ষ থেকে উপভাড়া হিসেবে নেওয়া হয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। এভাবে প্রায় ৫ শতাধিক কোয়ার্টার থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হচ্ছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। এ টাকা ভাগ হয় চমেককেন্দ্রিক চার সমিতির নেতাসহ সেখানকার বড় কর্মকর্তাদের মধ্যেও।

অভিযোগ রয়েছে, চমেক হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বসে মাদক ও জুয়ার আসর। এছাড়া হাসপাতালের ক্যান্টিন, ন্যায্যমূল্যের ফার্মেসি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কমমূল্যে সরাসরি ভাড়া নির্ধারণ করে গোপনে প্রতি মাসে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সাত থেকে আট লাখ টাকা। মাস শেষে পাওয়া টাকা চার সমিতির কার্যালয় থেকে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায় বিভিন্ন টেবিলে টেবিলে।

গত রোববার (২৯ নভেম্বর) অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারটি ক্যান্টিন, নায্যমূল্যের ফার্মেসি ও একটি মুদি দোকানের নামে করা অগ্রণী ব্যাংকের হিসাবে থাকা ২৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক পরিচালিত এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।

ওইদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোয়ার্টার উপভাড়া দিয়ে অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবরে চিঠিও দিয়েছে দুদক।

দুদক সূত্র বলছে, ১৯৮৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জায়গা, সরকারি স্থাপনা, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সবই সরকারি। সেখানে সরকারকে এক টাকাও রাজস্ব না দিয়ে বছরের পর বছর সংঘবদ্ধ এ চক্রটি অবৈধভাবে কোয়ার্টার বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রতি তিন বছর পর পর সমিতির নেতা পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন আসে না এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে। চার সমিতির শীর্ষ নেতা ছাড়াও টাকার ভাগ যায় বড় বড় কর্মকর্তাদের পকেটেও।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, চমেকের বাণিজ্যিক স্থাপনা দুইভাবে ভাড়া দেওয়া হয়। লোকদেখানো সরাসরি কমমূল্যে ভাড়া দেখিয়ে গোপনে চলে মোটা অংকের অর্থের লেনদেন। হাসপাতালের কোয়ার্টার, ক্যান্টিন, ন্যায্যমূল্যের ফার্মেসি ও দোকান থেকে প্রতিমাসে এভাবে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

দুদক এসব দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে তলব করেছে ইতিমধ্যে। আরও কয়েকজনকে পর্যায়ক্রমে তলব করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশন বরাবরে সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘হাসপাতালের কোয়ার্টারে মাদক ও জুয়া চলে কিনা আমার জানা নেই। আর দুদকের অভিযানের বিষয়েও আমি কিছু জানি না।’

মুআ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!