অপমৃত্যু মামলাতেই শেষ জিপিএইচ কারখানায় মৃত্যু, আবারও শ্রমিক নিহত

যাদের ঘাম ঝরানো কষ্টে গড়ে উঠেছে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানা, সেই শ্রমিকদের কোন মূল্যই নেই তাদের কাছে। কাজের সময় গুরুত্ব দেয়া হয় না শ্রমিকদের ন্যূনতম নিরাপত্তায়ও। আর তাই একের পর এক পুড়ছে আর মরছে চট্টগ্রামে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার শ্রমিক। এ বছরে একাধিক মৃত্যুর ঘটনার কোনটিই মামলা নেয়নি সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। আড়ালেই থেকে যাচ্ছে মৃত্যুর আলামত। অপমৃত্যু মামলাতেই শেষ হচ্ছে কারখানার শ্রমিক নিহতের ঘটনা। নিহত শ্রমিক পরিবারের দায়ভারও কেউ নিচ্ছে না।

সর্বশেষ শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা এলাকার জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় কাজ করার সময় নিহত হয়েছেন আরেকজন শ্রমিক। নিহত ৩৫ বছর বয়সী শ্রমিকের নাম মো. মোস্তফা, এ সময় মো. রাশেদ নামে এক শ্রমিক গুরুতর আহত হন। নিহত মো. মোস্তফা কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানার বারশিকুরার এলাকার মো. জসিমের ছেলে। আহত মো. রাশেদ (২৫) সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ হিঙ্গুলিপাড়ার মো. তাজুল ইসলামের ছেলে।

জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের জিপিএইচ ইস্পাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান কারখানায় মেইনটেইনের কাজ করার সময় প্যাডেলের ধাক্কা লেগে দুই শ্রমিক গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. মোস্তফাকে (৩৫) মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত মো.রাশেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার অবস্থাও আশংকাজনক বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আলাউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, নিহত শ্রমিকের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত স্বজনরা আসলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

কয়েকজন শ্রমিকের অভিযোগ, জিপিএইচ কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং কারখানার অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে শ্রমিক নিহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ নিয়ে প্রশাসন কিংবা কারও মাথা ব্যথা নেই। হচ্ছে না কোনো প্রতিবাদ। নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের আকুতি শুনছে না কেউ। এই প্রতিষ্ঠানে বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে থানায়ও যাওয়া যায় না উল্টো হয়রানি হওয়ার ভয়ে। গেলেও প্রতিকার একটিই, যা দেয় তা নিয়েই লাশটি নিয়ে যান বাড়িতে। হয়তো কারোর ভাগ্যে জুটেছে শুধু লাশ বহনের অ্যাম্বুলেন্সটি।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল ফোন রিসিভ করে এক ঘন্টা পর ফোন করবে বলে জানান। এরপর ২ ঘন্টা চেষ্টা করেও তার মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, সীতাকুণ্ড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় সকালে দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও একজন আহতদের খবর পেয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত ভিকটিমদের কেউ থানায় অভিযোগ করে নাই। অভিযোগ করলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রসঙ্গত, ১৯ অক্টোবর ছয় শ্রমিক দগ্ধ হওয়ার মাত্র এক মাস আগেই গত ২২ সেপ্টেম্বর জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানায় লোহার উত্তপ্ত লাভায় দগ্ধ হন সাতজন। এরা হলেন শাহীন আলম (২৭), টিপু সুলতান (৩২), শহীদুল ইসলাম (২৭), নুরুজ্জামান (৪০), আমীর হোসেন (২৭), রবীন্দ্র (৪০) ও ভারতীয় নাগরিক কেওয়াল সিং চৌহান (৪৬)। কারখানায় লোহা গলানোর সময় এই সাত কর্মী দগ্ধ হন। এদের বেশিরভাগই মুখ ও হাতে দগ্ধ হন। এদের সবারই শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরকম সারা বছরই জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এর জন্য কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন শ্রমিকরা।

এছাড়া ১০ এপ্রিল ভোরে লৌহজাত পণ্য লোডিংয়ের সময় লোহার পাতের চাপায় নিহত হন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিপিএইচের কারখানার শ্রমিক রণজিৎ বর্মন। ২৭ বছর বয়সী নিহত রণজিৎ রংপুর পীরগাছার মোহন চন্দ্র বর্মনের সন্তান। সীতাকুণ্ডে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় বিদ্যুৎস্পষ্টে দুই শ্রমিক নিহত হয় ৫ আগস্ট বিকেলে। নিহতরা হলো মমতাজ উদ্দিন (২৮) এবং আব্দুর রশিদ মাঝি (২৭)। এদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানার পূর্ব উজানটিয়া ইউনিয়নে।

এফএমও/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!