অপমানে চিরকুট লিখে কর্ণফুলী নদীতে ঝাঁপ দিল স্কুলছাত্রী

অপবাদ সইতে না পেরে কর্ণফুলী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে কেআরসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করা মুন্নি আক্তার (১৬)।

শনিবার (১ জুন) সকালে এই ঘটনা ঘটে। মুন্নী কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনার কয়লার-ডিপো এলাকায় মো. কাসেমের মেয়ে। আত্মহত্যা করার আগে পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি চিরকুটও দিয়ে যায় সে।

পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, মুন্নি আক্তার (প্রকাশ বিবি ফাতেমা) সম্প্রতি চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার হাফেজ এমরান হোসেনের ছেলে মো. ফরহাদের (১৭) সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই আসে ফরহাদ। ফাতেমার বাড়ির সামনে পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তারা কিছুক্ষণ কথা বলে। কিন্তু বিষয়টিকে ‘টোপ’ হিসেবে নেয় এলাকাবাসী। ডেকে আনেন ইউপি সদস্যকেও। এক পর্যায়ে ছেলেটিকে মসজিদের কোনায় আটকে রাখা হয়। ততক্ষণে এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় নানান মিথ্যাচার। এ সময় ফাতেমা ছেলেটাকে বলে, এলাকার মানুষ আমার নামে এভাবে মিথ্যা বদনাম ছড়িয়েছে, আপনি আমাকে বিয়ে করে নিন। কিন্তু ফরহাদ রাজি হয়নি। সে বলে, তোমার সাথে আমার সবে পরিচয় হলো, আমি কেন তোমাকে বিয়ে করবো?

অন্যদিকে অভিযোগ উঠে- ইউপি সদস্যও থানা-পুলিশের দোহাই দিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এলাকায় রটানো হয়েছে নানান কাহিনী। পরবর্তীতে সামাজিক এই মিথ্যাচার সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ফাতেমা।

শনিবার সকাল ৬টার দিকে চিরকুটে আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে কর্ণফুলী নদীতে ঝাঁপ দেয় ফাতেমা। পরে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরির দল প্রায় ১১ ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর বিকাল ৪টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিবি ফাতেমার ভাই মো. মোশাররফ হোসেন।

চন্দ্রঘোনা ইউপি সদস্য মো. আজিজুল হক (প্রকাশ- মন্ত্রী) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, আমি তাদের বলেছিলাম তারা যেনো থানায় যোগাযোগ করেন। অন্যদিকে হয়রানি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কাপ্তাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূরুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার ঘটনার সুত্রপাত হলেও আমরা তা জানতে পারি শনিবার। বিষয়টি কেউ আমাদের জানাননি।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল বলেন, শনিবার বিকেলে মরদেহটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস টিম। সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। তদন্তপূর্বক বিস্তারিত জানানো সম্ভব বলে মত দেন তিনি।

এদিকে কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মফিজুল হক বলেন, মেয়েটি সামাজিকভাবে বিব্রতকর অবস্থার মোকাবেলা করতে পারেনি, তাই হয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

কাপ্তাই উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এআর লিমন জানান, আমি শুক্রবার বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে গেলে ছেলেটিকে মসজিদে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাই। পরে স্থানীয়দের বলি যে একটা ছেলেকে এভাবে আটকে রাখার কোন লজিক নাই। সে যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে পুলিশের হাতে তুলে দিন কিন্তু কেন তাকে আটকে রেখেছেন? তবে মেয়েটি সামাজিক এই মিথ্যাচার সইতে না পেরে সেদিন আত্মহত্যা করার বিষয়টি সকলকে জানিয়েছিলো, কেউ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেয়নি। অবশেষে মেয়েটি আত্মহত্যা করলো।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!